আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত মেনেই ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে এই ঋণের পরিমাণ কিছুটা কমে ৪০০ কোটি মার্কিন ডলার হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ঢাকা সফরকারী আইএমএফ-এর প্রতিনিধিদলের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ঋণের পরিমাণ কত হবে তা ডিসেম্বরে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য বোর্ড সভায় চূড়ান্ত হবে। ওই সভায় ঋণের বিষয়টি অনুমোদন করা হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে ঋণের প্রথম কিস্তির ১০০ কোটি ডলার ডিসেম্বরেই পাবার আশা করছে বাংলাদেশ। আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ পেলে অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পেতে বাংলাদেশের পক্ষে সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, শর্তের সব বিষয়ই ইতোমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার আইএমএফ প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এই বৈঠকে মূলত ঋণ পাওয়ার শর্তগুলোর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো চূড়ান্ত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, আইএমএফের শর্ত প্রসঙ্গে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বেশকিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এগুলো ইতোমধ্যে আইএমএফকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওসব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সরকার এখনই ঋণ পেতে জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়াবে না। জিডিপির হিসাব আধুনিকায়ন পদ্ধতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে এটি প্রকাশ করতে সময় লাগবে।
এছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের নিট হিসাব করা হবে, তবে এটি এখনই প্রকাশ করা হবে না। এ বিষয়টি প্রকাশ করা হবে সময় নিয়ে। সুদের হারের সীমা তুলে দেওয়া হবে পর্যায়ক্রমে। খেলাপি ঋণের নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানের করা হবে। কর জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমানো হবে পর্যায়ক্রমে। সরকারের ওসব সিদ্ধান্তের কথা ইতোমধ্যে আইএমএফকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, আইএমএফ প্রতিনিধিদলটি আজ বুধবার (৯ নভেম্বর) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বিদায়ী সাক্ষাৎকারে মিলিত হবেন। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে এই বৈঠকটি আজ বেলা ২টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে মন্ত্রীর জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারটি সৌজন্য সাক্ষাৎ বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে আইএমএফের সঙ্গে বৈঠকের পর অর্থমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে ব্রিফ করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া আইএমএফের পক্ষ থেকেও একটি বিবৃতি সংবাদমাধ্যমের কাছে বিকেলে দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
এদিকে, আইএমএফের শর্তের বিষয়গুলো নিয়ে এই আলোচনা সঙ্গে জড়িত কোনো সরকারি কর্মকর্তাই গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। এই বিষয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলতে নিষেধও করা হয়েছে। তবে যতটুকু জানা গেছে, আইএমএফের স্বল্প মেয়াদে পালনীয় শর্তের মধ্যে রয়েছে ভর্তুকি কমানোর জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। তবে এ ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ, গ্যাস বা সারের দাম সমন্বয় বা বাড়ানোর সরাসরি কোনো শর্ত দেয়নি আইএমএফ।
সংস্থাটি বলেছে, বাংলাদেশকে উদ্যোগ নিতে হবে কিভাবে তারা ভর্তুকির বোঝা কমাবে। ভর্তুকি কমানোর কৌশলপত্র আইএমএফের কাছে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। বাংলাদেশ এই শর্তের বিষয়ে একমত পোষণ করেছে। তবে কৃষকদের দেওয়া সারের ভর্তুকি এই মুহূর্তে কমানো সম্ভব নয় বলে আইএমএফকে জানানো হয়েছে।
অন্য যে শর্তের বিষয়ে বাংলাদেশ রাজি হয়েছে বলে জানা গেছে তার মধ্যে রয়েছে, দ্রুত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হিসাবায়ন পদ্ধতি আন্তর্জাতিক মানের করা, কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণের সুদের ঊর্ধ্বহারের পরিবর্তন, জিডিপি ও মূল্যস্ফীতির হিসাবের পরিবর্তন আনা, খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন, ব্যাংকিং খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা জোরদার করা, ব্যাংকের আমলা পরিচালকদের সংখ্যা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা, কর-জিডিপির অনুপাত বৃদ্ধি করা এবং পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেন্টাল পাওয়ার থেকে সরে আসা।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খুব দ্রুত রিজার্ভের হিসাব নতুন পদ্ধতিতে করা হবে। এই শর্ত মানার ফলে এখনকার রিজার্ভ থেকে ‘রফতানি উন্নয়ন তহবিলে’ (ইডিএফ) দেওয়া সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বাদ দিতে হবে। এই ঋণ করোনার সময় ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে। যা ফেরত পাবার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কিন্তু এখান থেকে সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে প্রকৃত রিজার্ভ দাঁড়াবে ২৮ বিলিয়ন ডলার। আর খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হলে ৯০ দিনের মধ্যে ঋণের কিস্তি শোধ না হলে সেই ঋণকে খেলাপি হিসেবে গণ্য করা হবে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখনই এই শর্ত মানা সম্ভব নাও হতে পারে। এটি মধ্য বা দীর্ঘমেয়াদে পরিপালন করা হবে।