শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার কারসাজির দায়ে ‘চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহূমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’ এর নেতৃত্ব দেওয়া মো: জসিম উদ্দিন চক্রকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে কমিশন। যে কারসাজিতে ভূমিকা রেখেছে জসিমের নেতৃত্বাধীন চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহূমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেড এর ১৭টি শাখা।
দেখা গেছে, কারসাজিতে জসীম চক্র আড়াই মাসেরও কম সময়ের ব্যবধানে (২৮ জুন-৫ সেপ্টেম্বর ২০২১) অলটেক্সের ১০.১০ টাকার শেয়ার ২৩.৪০ টাকায় উঠায়। এক্ষেত্রে দর বাড়ানো হয় ১৩.৩০ টাকা বা ১৩১.৬৮%।
এই দর বৃদ্ধিতে জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন সংঘবদ্ধ চক্র জড়িত বলে ডিএসইর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। যারা ইমিনেন্ট সিকিউরিটিজ ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্সিয়াল ট্রেডিং ব্রোকারেজ হাউজে থাকা ১৯টি বিও হিসাব থেকে কারসাজি করে।
কারসাজি চক্রটি ডিএসইর তদন্তকালীন ২১ সালের ২৮ জুন-৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে গড় ১৬.২৪ টাকা দরে ৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকায় ৩৯ লাখ ৬১ হাজার ৭৬০টি শেয়ার কিনে। একই সময়ে তারা গড় ১৬.৫০ টাকা করে ৬ কোটি ৮৮ লাখ টাকায় ৪১ লাখ ৭১ হাজার শেয়ার বিক্রি করে। বিক্রি করা শেয়ারগুলো ক্রয়ে গড় ব্যয় হয়েছিল ১৩.৯৭ টাকা। যাদের হাতে এরপরেও আরও ৭ লাখ ৮৫ হাজার শেয়ার ছিল।
ওই বিক্রি থেকে জসিম চক্র শেয়ারপ্রতি ২.৫৩ টাকা করে মোট ১ কোটি ৫ লাখ টাকার রিয়েলাইজড গেইন করে। এছাড়া শেয়ারপ্রতি ৩.৪৭ টাকা করে আনরিয়েলাইজড গেইন দাঁড়ায় ২৭ লাখ টাকা।
এভাবে মুনাফা করতে গিয়ে সিরিজ ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে জসিম চক্রটি সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচঞ্জ অধ্যাদেশ ১৯৬৯ এর ধারা ১৭(ই)ভি) ভঙ্গ করেছে। এ বিষয়ে চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর কারন দর্শাতে জসিম উদ্দিন ও সহযোগিদেরকে শুনানিতে তলব করা হয়।
শুনানিতে জসিম চক্র লিখিত বক্তব্যে আন্তরিক দুঃখ প্রকাশ ও অনিচ্ছাকৃত ভুল হয়েছে বলে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তারা দাবি করেছেন, শেয়ারবাজারের সঙ্গে পরিপূর্ণভাবে জড়িত, সেহেতু ইচ্ছাকৃতভাবে বা অসৎ উদ্দেশ্যে নিয়ে কোন লেনদেন করার বা আইন লঙ্ঘন করার চেষ্টা করেন নাই। তারপরেও যদি অলটেক্সের শেয়ার লেনদেনে কোন প্রকার আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকে, তাহলে সেটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং ভুলক্রমে সংঘটিত হয়েছে। ভবিষ্যতে তারা এ ধরনের ভুল থেকে আরও অনেক সতর্ক থাকব। একইসঙ্গে তাদের ৯৬ কোটি টাকার বিনিয়োগ ৫৪ কোটিতে নেমে এসেছে বলেও তারা দাবি করেন।
তারা জানায়, তাদের মূল প্রতিষ্ঠান ‘চান্দ্রা শিক্ষিত বেকার যুব বহূমূখী সমবায় সমিতি লিমিটেড’। যা ২০০১ সালে চাঁদপুর জেলা অফিস সমবায় অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধিত হয় এবং ১৭টি শাখার মাধ্যমে সমবায় সমিতি আইন মেনে ব্যবসা করছে। যার ১৬ হাজার সদস্যের জমাকৃত অর্থের একটি অংশ সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা হয়। যে সমিতি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর থেকে ৩ বার জাতীয় সমবায় পুরুস্কার পেয়েছে।
তার বক্তব্যে উপস্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে কমিশন মনে করে। যে কারনে তার ব্যাখ্যা কমিশনের কাছে বিবেচনাযোগ্য হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বাজারে শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা রক্ষার স্বার্থে কনিকা আফরোজ ও তার সহযোগিদেরকে জরিমানা করা প্রয়োজন এবং সমীচীন বলে কমিশন মনে করে। যে কারনে কমিশন জসীম উদ্দীন ও তার সহযোগিদেরকে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। এই শাস্তির বিষয়ে সম্প্রতি চিঠির মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে কমিশন।