চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের চেয়ে কমবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্ব অর্থনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে মঙ্গলবার রাতে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল ইকোনমিক প্রসপেক্টস’ রিপোর্টে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। গত অক্টোবরে প্রকাশিত বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর প্রতিবেদন ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’-এ প্রবৃদ্ধির একই পূর্বাভাস দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। অবশ্য সংস্থাটি মনে করছে, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমে আসতে পারে এবং প্রবৃদ্ধি বেড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।
বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস সরকারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক কম। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অবশ্য অর্থনীতিতে ধীরগতি থাকায় এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণের কারণে সম্প্রতি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সাময়িক হিসাবে গত অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক গত অর্থবছরের জন্য ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করেছে। এদিকে সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে। এর আগে আইএমএফ তাদের কান্ট্রি রিপোর্টে চলতি অর্থবছরে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অনুমান করেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবির মতে প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমতে পারে। চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি বহাল থাকতে পারে, যা ভোগের ওপর প্রভাব ফেলবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিম্নমাত্রায় থাকতে পারে এবং সে কারণে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকতে পারে। আমদানির ওপর এই নিয়ন্ত্রণ বেসরকারি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত করতে পারে। প্রসঙ্গত, ভোগ ও বিনিয়োগে ধীরগতি থাকলে তা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের রপ্তানি আশানুরূপ বাড়ছে না। বিষয়টি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে কিছু সময় অনিশ্চয়তা ছিল, যা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে প্রভাব ফেলতে পারে।
২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশ। কিন্তু গত অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে ৬ শতাংশের মতো। প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক আমদানি নিয়ন্ত্রণ, জ্বালানির উচ্চমূল্য এবং বাহ্যিক ও আর্থিক চাপের কথা উল্লেখ করেছে। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর মূল্যস্ফীতির সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। খাদ্যের উচ্চমূল্য ও বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। প্রসঙ্গত, কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের কাছাকাছি। গত নভেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৪৯ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বাড়ছে বেশি হারে। সরকার এবং বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, আগামী জুন নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে আসবে।
বিশ্ব অর্থনীতি : বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতিতে পরপর তিন বছর প্রবৃদ্ধি কমতে যাচ্ছে। ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করা হয় ২ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২৪ সালে যা ২ দশমিক ৪ শতাংশ হতে পারে। ২০২৪ সাল শেষে গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ধীরগতির অর্ধদশক হতে যাচ্ছে। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নিকট মেয়াদে বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে। ২০২৪ সাল শেষে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গড়ে চারজনের মধ্যে একজনের অবস্থা করোনা-পূর্ববর্তী পরিস্থিতির চেয়ে দুর্বল হতে পারে। নিম্ন আয়ের দেশগুলোর ক্ষেত্রে এ হার হতে পারে ৪০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। এ অঞ্চলে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে সবচেয়ে বেশি। চলতি অর্থবছরে ভারতের জিডিপির প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী অর্থবছরের জন্য পূর্বাভাস রয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। শ্রীলঙ্কায় গত দুই বছরে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির পর এ বছর ১ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস রয়েছে বিশ্বব্যাংকের প্রতি
বেদনে।