বিনিয়োগকারীদের অবণ্টিত ও পরিশোধিত না হওয়া লভ্যাংশের অর্থ বারবার নির্দেশ ও সময় দেওয়ার পরও পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল বা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে (সিএমএসএফ) জমা দেয়নি তালিকাভুক্ত বেশ কিছু কোম্পানি। সেই সঙ্গে লভ্যাংশের অর্থ বিতরণে কারসাজি করার অভিযোগ রয়েছে এরমধ্যে থাকা বেশ কয়েকটি কোম্পানির বিরুদ্ধে। তাই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে প্রথমে ধাপে তালিকাভুক্ত ৫০টি কোম্পানির নিরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সম্প্রতি এ বিষয়ে নির্দেশ ও কিছু নির্দেশনা দিয়ে সিএমএসএফের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার (সিওও) কাছে পাঠিয়েছে কমিশন। সিএমএসএফকে চিঠি জারির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিডিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পন্ন নিরীক্ষাদের তালিকা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া নিরীক্ষকদের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করার জন্য বিএসইসির একজন সহ চার সদস্যের সমন্বয়ে একটি পৃথক কমিটি গঠন করতে বলেছে বিএসইসি।
এরআগের চিঠির বিষয়ে উল্লেখ করে সিএমএসএফকে দেয়া চিঠিতে বিএসইসি জানিয়েছে, এই বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে যে কমিশন ৫০টি তালিকাভুক্ত কোম্পানি বা সিকিউরিটিজকে প্রধম ধাপে নিরীক্ষা পরিচালনা করার জন্য সম্মতি দিয়েছে। এতে প্রথমে কোম্পানির দাবি পরিশোধ না করা লভ্যাংশের পরিমাণের অবস্থা যাচাই করতে হবে। পাশাপাশি চিঠিতে উল্লেখিত বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ড) বিধিমালা, ২০২১ এর বিধি অনুসারে এবং অনুমোদিত টিওআর (পরিশিষ্ট বি) অনুসারে শর্তগুলো পালন করতে বলা হয়েছে।
চিঠিতে যে শর্তগুলো পালন করতে বলা হয়েছে সেগুলো হলো, প্রাথমিকভাবে সিএমএসএফ এ চিঠি জারির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিএসইসি নিরীক্ষকদের প্যানেল থেকে প্রতিযোগিতামূলক বিডিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিরীক্ষকদের তালিকা জমা দিবে। নিরীক্ষক নিয়োগ কমিশন দ্বারা নিশ্চিত করা হবে। নিরীক্ষকদের প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করার জন্য বিএসইসির একজন সহ মোট চার সদস্যের সমন্বয়ে একটি পৃথক কমিটি গঠন করা হবে। উল্লেখ্য, কমিটির আহ্বায়ক বিএসইসি হতে হবে এবং কমপক্ষে একজন সদস্য একজন পেশাদার হিসাবরক্ষক হতে হবে। এছাড়া পূর্বের চিঠিতে কমিশনের উল্লিখিত শর্তাবলী বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
এরআগে লভ্যাংশের টাকা জমা দেয়নি এবং অর্থ বিতরণে কারসাজি করেছে সেসব কোম্পানির বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে চারটি নিরীক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা। গত ৫ ফেব্রুয়ারি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
এ বিষয়ে বিএসইসির একটি চিঠিতে বলা হয়, সিএমএসএফের সহযোগিতায় কমিশন যেসব কোম্পানি দাবিদারহীন বিনিয়োগকারীদের অবণ্টিত অর্থ জমা এখনো ফান্ডে জমা দেয়নি, সেসব কোম্পানিতে অডিটর নিয়োগ করা হবে।
এক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর অতীত ইতিহাস যেমন-ঋণ খেলাপী কী না, নন-কমপ্লায়েন্স ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানি কী না তা দেখে কমিশন অডিটর নিয়োগ করা হবে। চারটি অডিটর কোম্পানিকে বাছাই ও নিয়োগ করবে বিএসইসি। অডিটরের সমস্ত ব্যয় বহন করবে সিএমএফএস ফান্ড। অডিট কমিটিকে সব ধরনের সহযোগিতা করবে সিএমএসএফ কর্তৃপক্ষ।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ৩১ অক্টোবর সময় পর্যন্ত পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল বা ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের (সিএমএসএফ) আকার দাঁড়িয়েছে ১১২১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে নগদ অর্থ দাঁড়িয়েছে ৪৮৯ কোটি ১ লাখ টাকায়। আর ৮ কোটি ১২ লাখ শেয়ার বাবদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা।