ফিলিস্তিনের গাজা ভূখণ্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। টানা প্রায় তিন মাস ধরে চালানো এই হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ২২ হাজার ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধ বন্ধের দাবি ক্রমেই জোরালো হলেও ইসরায়েল বলেছে, গাজায় যুদ্ধ চলবে ২০২৪ সাল জুড়ে। এ লক্ষ্যে তারা প্রস্তুতিও নিচ্ছে।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, ২০২৪ সাল জুড়ে গাজায় সংঘাত অব্যাহত থাকবে বলে তারা আশা করছে। নতুন বছর উপলক্ষ্যে দেওয়া এক বার্তায় ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র বলেছেন, ‘দীর্ঘদিন লড়াইয়ের’ প্রস্তুতির জন্য সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে।
মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, কিছু সৈন্যকে - বিশেষ করে যারা সংরক্ষিত - তাদের পুনরায় সংগঠিত করার জন্য গাজা থেকে প্রত্যাহার করা হবে। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বছরের বাকি সময় ধরে লড়াই চলবে এবং এজন্য আইডিএফকে অবশ্যই আগে থেকে পরিকল্পনা করতে হবে। এই কারণে কিছু রিজার্ভ সেনা ‘এই সপ্তাহের মধ্যেই’ গাজা ত্যাগ করবে যাতে তারা ‘আসন্ন অভিযানের আগে পুনরায় শক্তি যোগাতে পারে’।’
মূলত গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা প্রায় ২২ হাজারে পৌঁছেছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
এছাড়া আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৫৭ হাজার মানুষ। ইসরায়েলের এই হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার কোনও অবকাঠামো। তারা মসজিদ, গির্জা, স্কুল, হাসপাতাল, শরণার্থী শিবিরসহ বেসামরিক মানুষের বাড়ি-ঘর সব জায়গায় হামলা চালিয়ে আসছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ১৫৬ জন নিহত এবং আরও ২৪৬ জন আহত হয়েছেন বলেও গাজার এই মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
আইডিএফ বলেছে, তারা দেইর আল-বালাহ শহরে রাতের আঁধারে হামলা চালিয়ে হামাস কমান্ডার আদিল মিসমাহকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গাজা শহরে রাতভর বোমা হামলায় অন্তত ৪৮ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বার্তাসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, আরেকটি হামলায় শহরের পশ্চিমে আল-আকসা বিশ্ববিদ্যালয়ে আশ্রয় নেওয়া ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে সোমবার সকালে আরেকটি হামলায় আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জাতিসংঘ বলছে, গাজার ২৪ লাখ মানুষের ৮৫ শতাংশই - প্রায় ২০ লাখ - এখন বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। রয়টার্স জানিয়েছে, ক্রমবর্ধমান স্বাস্থ্য জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলায় সহায়তার জন্য পোলিও এবং হাম-সহ শিশুদের রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে হাজার হাজার ডোজ টিকা গাজায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বার্তাসংস্থাটি ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, ১৪ মাস পর্যন্ত টিকা দেওয়া যাবে এমন পরিমাণ চিকিৎসা সরবরাহ মিসরের রাফাহ সীমান্ত দিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে।
রাফাহ থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আয়াদিল সাপারবেকভ বিবিসিকে বলেছেন, গাজাবাসীরা যে পরিস্থিতিতে বাস করছে তার জন্য এসব ভ্যাকসিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তার ভাষায়, ‘পানির অবস্থা অত্যন্ত খারাপ, দুর্বল স্বাস্থ্যবিধি এবং খুব খারাপ স্যানিটেশন ব্যবস্থাসহ হাজার হাজার মানুষ জনাকীর্ণ শিবিরগুলোতে একত্রে বসবাস করছে। আর এগুলোই বিভিন্ন রোগের প্রজনন ক্ষেত্র।’