ইউনাইটেড হাসপাতালে খতনা করার পর শিশু আয়ানের মৃত্যু নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন আইওয়াশ ছাড়া কিছু না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আজ সোমবার (২৯ জানুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ কথা বলেন।
হাইকোর্ট বলেছেন, চিকিৎসায় অবহেলা দেখছেন উচ্চ আদালত। স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন আইওয়াশ ও হাস্যকর।
সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে লাশ হয়ে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফেরে শিশু আয়ান। তার মৃত্যুতে অতিরিক্ত অ্যানেস্থেশিয়া দেয়ার অভিযোগ তোলে পরিবার। তবে এ ঘটনায় দেয়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদনে নেই মৃত্যুর কারণ। এমনকি মৃত্যুর জন্য কাউকে সরাসরি দায়ীও করা হয়নি। রোববার (২৮ জানুয়ারি) অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন জমা দেয় অধিদফতর। আজ তার শুনানি হয়েছে।
এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খতনার অপারেশনের আগে আয়ানকে নেবুলাইজার ও ইনহেলার দেয়ার বিষয়টি চিকিৎসককে জানায়নি পরিবার। অপারেশনের সময় স্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয় তার। আয়ানের মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট করে বলা হয়নি সেখানে। এমনকি সরাসরি কাউকে দায়ীও করা হয়নি। শুধুমাত্র ভবিষ্যতে এ ধরনের মৃত্যু ঠেকাতে চার দফা সুপারিশ করে দায় সেরেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত কমিটি।
তবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আয়ানের পরিবার। আর মামলা তুলে নিতে হুমকি আসায় রাজধানীর শাহবাগ থানায় জিডি করেছেন আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ।
এদিকে শিশু আয়ানের মৃত্যুর পর ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও অভিযোগ নিয়ে একজোট হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।
আইনজীবী জানান, তিন মাসের মধ্যে গত ১৫ বছরের খতিয়ান ইউনাটেড হাসপাতালের কাছে চেয়েছেন উচ্চ আদালত।
তবে রোববার এক ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, হাইকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরইমধ্যে সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়া হয়। হাইকোর্ট থেকে কী রায় দেয়, সেটা দেখেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত: গত ৩১ ডিসেম্বর খতনা করানোর জন্য আয়ানকে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান তার অভিভাবক। সকাল ৯টার দিকে শিশুটিকে অ্যানেসথেসিয়া দেয়া হয়। তবে অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেসথেসিয়া’ (জেনারেল) দিয়ে চিকিৎসক আয়ানের খতনা করান বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে জ্ঞান না ফেরায় তাকে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার পিআইসিইউতে (শিশু নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্র) তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গত ৯ জানুয়ারি রাজধানীর বাড্ডা থানায় আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বাদী হয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল ও ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুই চিকিৎসক, অজ্ঞাতনামা কর্মকর্তা-কর্মচারী ও একজন পরিচালককে আসামি করে মামলা করেন।