দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) তালিকাভূক্ত বীমা খাতের কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালনা পর্ষদকে কেন সাসপেন্ড করা হবে না তার ব্যাখ্যা চেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা (আইডিআরএ)। বিমাকারী ও বিমা গ্রহীতাদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।
আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে বলে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) এই চিঠি পাঠানো হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, বিমা আইনের বিধি-প্রবিধান লঙ্ঘন, নানাবিধ আর্থিক অনিয়মের জন্য বিমাকারী ও বিমা গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষার্থে বিমা আইন ২০১০ এর ৯৫(১) ধারা অনুসারে পরিচালনা পর্ষদকে কেন সাসপেন্ড করা হবে না। আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এর সঠিক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
যেসব অনিয়মের কথা তুলে ধরা হয় তা হলো
কোম্পানির এফডিআর’র বিপরীতে সাউথ বাংলা ব্যাংকে এসওডি হিসাব নং- ০০০২৬২২০০০০৭৩ খোলা এবং উক্ত ঋণ হিসাব হতে ৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ও একই ব্যাংকের সঞ্চয়ী হিসাব নং- ০০০২১৩০০০০৩৩৪ হতে ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা উত্তোলন করে মোট ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ৪ জন পরিচালকের শেয়ার ক্রয়ের মূল্য পরিশোধ।
২০২২ সালে কোম্পানির বোর্ডে পারিবারিক কর্তৃত্ব বজায় রাখার লক্ষ্যে একই পরিবারের ৪ জন সদস্যের নামে বিপুল সংখ্যক শেয়ার বিনামূল্যে হস্তান্তর করে পরিবারের সর্বাধিক সদস্যকে পরিচালক রাখা।
২০২৩ সালে কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের (ড্রাগন সোয়েটার) প্রতি মাসে ঋণের কিস্তি বাবদ ৩ কোটি টাকা কোম্পানির হিসাব থেকে জনতা ব্যাংকে পরিশোধ করা।
বর্তমান চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন ভবন কোম্পানির জন্য ক্রয়ের নামে কোম্পানির এফডিআর’র বিপরীতে সোশ্যাল ইসলামি ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার ব্যাংক ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামি ব্যাংক হতে ১৫২ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ এবং এ জন্য ৩ বছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকার বেশি সুদ প্রদান।
বর্তমান চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন ইম্পেরিয়াল ভবন কোম্পানি কর্তৃক ৩৫০ কোটি টাকায় ক্রয়ের জন্য করা সমঝোতা চুক্তি।
আইডিআরএ’র অনুমতি ছাড়াই অক্টোবর, ২০২১ হতে নভেম্বর, ২০২৩ সময়ে ইম্পেরিয়াল ভবনের মূল্য বাবদ বর্তমান চেয়ারম্যানের ৫৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা গ্রহণ। একই সময়ে কোম্পানির তহবিল থেকে মোট ৬১ কোটি ৬২ লাখ ৯০ হাজার ৫শ’ টাকা উত্তোলনপূর্বক বর্তমান চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ।
কোম্পানির পরিচালকগণ কর্তৃক অবৈধভাবে মাসিক বেতনভাতা হিসেবে ২০২১ সালের ১ সেপ্টেম্বর হতে ২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সময়কালে ৩ কোটি ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং পরবর্তীতে এরূপে আরো অর্থ গ্রহণ।
আইডিআরএ’র সার্কুলার অমান্য করে কোম্পানির চেয়ারম্যানের জন্য ১ কোটি ৭০ লাখ টাকায় বিলাসবহুল অডি গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১৭-৩৬৯৫) ক্রয় ও ২০২১-২৩ মেয়াদে এর রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ করা বিপুল ব্যয়।
চেয়ারম্যান ও তার পরিবারের সদস্য পরিচালকগণ কর্তৃক কোম্পানির ঘোষিত লভ্যাংশের অতিরিক্ত লভ্যাংশ গ্রহণ।
কোম্পানির চেয়ারম্যানের বিদেশে চিকিৎসার যাবতীয় খরচ, নিজের ও পরিবারের সদস্যদের ভ্রমণ ও শপিং খরচ, বিদেশে পড়ালেখার খরচ অবৈধভাবে কোম্পানির তহবিল হতে নির্বাহ।
কোম্পানির একজন পরিচালক (শেখ মোহাম্মদ ড্যানিয়েল) এর ব্যক্তিগত অফিস কোম্পানির ভেতরে থাকা, গ্রুপ বীমা পলিসি থেকে বড় অঙ্কের কমিশন গ্রহণ এবং ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখ হতে পরিচালক না হয়েও বোর্ড সভায় অংশগ্রহণ, সম্মানী-বোনাসসহ বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ এবং ব্যাংক হিসাবের সিগনেটরী থাকা।
কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যান ২০১৪ সাল থেকে ব্যক্তিগত ঋণ সমন্বয়, বিজিএমইকে অনুদান, এসি ক্রয়, বিনোদন (পারিবারিক অনুষ্ঠান, বিবাহের উপহার), দুপুরের খাবার ও সন্ধ্যার নাস্তার বিল, কোরবানির গরু ক্রয়সহ (২০২২ সালে) ব্যক্তিগত খরচ, ২০২২ ও ২০২৩ সালে নিজের ও পরিবারের সদস্যদের বিদেশ ভ্রমণ ব্যয় (১ কোটি ৯২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা) আইপিও খরচের নামে অতিরিক্ত টাকা (১ কোটি) এবং পলিসি নবায়ন উপহার বাবদ নিজ প্রতিষ্ঠানের জন্য ১ কোটি ২৩ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ইত্যাদি অর্থ কোম্পানি হতে আত্মসাত।
বর্তমান চেয়ারম্যানের ১৫ তলা ভবনে বিভিন্ন অফিস/প্রতিষ্ঠান ভাড়া থাকা সত্ত্বেও সকল ইউটিলিটি বিল কোম্পানি হতে পরিশোধ এবং ২০২১ সাল হতে ইম্পেরিয়াল ভবন কোম্পানি কর্তৃক পুরোপুরি ব্যবহার না করা সত্ত্বেও চেয়ারম্যান অবৈধ প্রভাবের মাধ্যমে পুরো ১৫ তলা ভবনের ভাড়া সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড হতে পরিশোধ।
কোম্পানির বর্তমান চেয়ারম্যানের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান ড্রাগন সোয়েটার ও স্পিনিং লিমিটেডের ২০২১ সালের ট্যাক্স বাবদ (১৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা) সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড হতে পরিশোধ।