ফের ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে উত্তর কোরিয়া। রোববার (১২ মার্চ) পারমাণবিক অস্ত্রে সজ্জিত পূর্ব এশিয়ার এই দেশটি সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপের মাধ্যমে দু’টি কৌশলগত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা কেসিএনএ।
মূলত যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক মহড়া শুরু হওয়ার ঠিক আগে কৌশলগত ওই ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করে দেশটি। ‘কৌশলগত’ শব্দটি সাধারণত পারমাণবিক ক্ষমতা সম্পন্ন অস্ত্র বোঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সোমবার (১৩ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, সর্বশেষ এই উৎক্ষেপণ ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেমের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করেছে এবং একইসঙ্গে সাবমেরিন ইউনিটগুলোর ডুবো আক্রমণাত্মক অপারেশনও এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়েছে, যা মূলত উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতির অংশ।
দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ (জেসিএস) বলেছেন, তাদের সামরিক বাহিনী উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে এবং দক্ষিণ কোরীয় গোয়েন্দা সংস্থা মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সর্বশেষ এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণের কাজ করছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী সোমবার থেকে তাদের ‘ফ্রিডম শিল্ড’ সামরিক মহড়া শুরু করেছে। ২০১৮ সালের পর থেকে এই প্রথমবারের মতো এতো বড় আকারের সামরিক মহড়া অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যদিও পাঁচ বছর আগে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু নিরস্ত্রীকরণকে আরও এগিয়ে নেওয়ার জন্য শুরু হওয়া কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সমর্থনে এই মহড়া স্থগিত করেছিল ওয়াশিংটন ও সিউল।
দক্ষিণ কোরিয়া ও মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর মতে, এই মহড়া কমপক্ষে ১০ দিন ধরে চলবে এবং উত্তর কোরিয়ার ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক হুমকির মধ্যে ‘পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা পরিবেশের’ ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে এই ধরনের সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়া তাদের ওপর আক্রমণের মহড়া হিসাবে দেখে থাকে। আর তাই নিজের আত্মরক্ষার জন্য এই পারমাণবিক অস্ত্র এবং ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি উত্তর কোরিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় বলে যুক্তি দিয়ে তাকে পিয়ংইয়ং।
উত্তরের সাথে সম্পর্ক পরিচালনাকারী দক্ষিণ কোরিয়ার একত্রীকরণ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কু বিয়ং-স্যাম বলেছেন, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, উত্তর কোরিয়া আমাদের নিয়মিত, প্রতিরক্ষামূলক মহড়াকে উস্কানির অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করছে। আমি আশা করি, উত্তর কোরিয়া বুঝতে পেরেছে যে- কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা বাড়িয়ে আসলে তাদের পাওয়ার কিছুই নেই।’
উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়া গত বছর প্রায় ৭০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। যার মধ্যে আটটি আন্তঃমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রও রয়েছে। দেশটির ইতিহাসে যা এক বছরে সবচেয়ে বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালানোর রেকর্ড।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাদের মিত্রদের হুমকির কারণে নিজেদের সামরিক শক্তি আরও আধুনিকরণের ঘোষণাও দিয়েছে পিয়ংইয়ং।