গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। এরপরই এমপি-মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দিতে শুরু করে। গা ঢাকা দেন সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তিরা। এদের মধ্যে রয়েছেন শোজিব অঙ্গনের একাধিক তারকা।
এখনো খোঁজ মেলেনি জনপ্রিয় তারকা ও সাবেক সংসদ সদস্য ফেরদৌসের। শেখ সেলিমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার অভিযোগে আলোচনায় উঠে এসেছেন অভিনেত্রী নিপুণ। সরকার পতনের পর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না আরো অনেক তারকা অভিনয়শিল্পীর। এমনকী সামাজিক মাধ্যমেও নেই বেশির ভাগ শিল্পীর কার্যক্রম।
রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে হামলার শিকারও হয়েছেন কয়েকজন। কেউ দেশ ছেড়ে পলায়ন করছেন, কেউ বা কাজ না পাওয়াসহ নানাবিধ সংকটে পড়েছেন। ২০১৮ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক-বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন অভিনেত্রী রোকেয়া প্রাচী। সরকারের সব কার্যক্রমে থাকেন।
আওয়ামী লীগের সর্বশেষ করা নির্বাচনে নৌকার হয়ে একই আসন থেকে মনোয়ন ফরম কিনেছিলেন শমী কায়সার এবং রোকেয়া প্রাচী। দুইজনই আশাহত হয়েছেন। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে অবস্থান কর্মসূচী করে হামলার শিকার হন এই অভিনেত্রী। আওয়ামীলীগ সরকারের ঘরের মানুষ হিসেবে পরিচিত অভিনেত্রী শমী কায়সারও সরকার পতনের ফলে বিপাকে পড়েছেন। সদ্যই ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-ক্যাবের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন এই অভিনেত্রী।
সরকার পতনের পর অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফার বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে বেশ কয়েকজন। খবরটি নিশ্চিত করেছেন অভিনেতা সাজু খাদেম ও অভিনেত্রী বিজরী বরকতুলস্নাহ। তারা জানান, বাড়িতে হামলা হলেও নিরাপদে আছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। ২০১৯-২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হয়ে সংরক্ষিত মহিলা আসন-৪-এর প্রতিনিধিত্বকারী জাতীয় সংসদ সদস্য ছিলেন সুবর্ণা মুস্তাফা।
এ ছাড়া পাঁচবারের এমপি আসাদুজ্জামান নূর, সাবেক নারী সংরক্ষিত আসনের এমপি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী তারানা হালিমের কোনো খোঁজ নেই কোথায় আছেন তারা। পলাতক আছেন অভিনেত্রী সোহানা সাবাও।
এদিকে ৫ আগস্টের পর থেকে খোঁজ নেই অভিনেতা ফেরদৌস আহমেদের। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে নির্বাচন করে ঢাকা-১০ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। গুঞ্জন আছে, এই মুহূর্তে ভারতে আছেন ফেরদৌস। অনেকের ধারণা, দেশেই আছেন তিনি।
ফেরদৌসের মতো আত্মগোপনে আছেন চিত্রনায়ক রিয়াজও। রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার খবর না মিললেও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামনের সারিতেই দেখা যেত এই অভিনেতাকে।
একই অবস্থা আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ও সঙ্গীতশিল্পী মমতাজের। তারও কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ২০০৮ সালে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এবং ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
রাজনীতির সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা না থাকলেও আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের সমর্থনে কথা না বলায় রোষানলে পড়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। মায়ের অসুস্থতার কারণে ফেসবুকে সক্রিয় ছিলেন না জানানোর পরও অভিনেতার দিকে ধেয়ে আসে নেতিবাচক মন্তব্য। যদিও তিনি প্রথমে আন্দোলনে ছয় ছাত্রের হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। তবে শেখ হাসিনার পতনের পর চঞ্চলের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে অসংখ্য অনুরাগীকে।