রমজানে বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চিনি আমদানিতে শুল্ক কমিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে এর সুফল তো নেই-ই, উল্টো দাম বাড়ছে। নতুন করে কেজিতে দুই টাকা বাড়িয়ে প্যাকেটজাত চিনি বাজারে ছেড়েছে পরিশোধনকারীরা। অন্যদিকে এস আলম গ্রুপের চিনির কারখানা পুড়ে যাওয়ার খবরে কিছুটা প্রভাব পড়েছে খোলা বাজারে। তবে নতুন কম দরের সয়াবিন তেলের বোতল বাজারে আসেনি। কিন্তু কোথাও কোথাও পুরোনো দরের তেল পাওয়া যাচ্ছে নতুন দামে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি সরকার প্রতি টন অপরিশোধিত চিনিতে আমদানি শুল্ক দেড় হাজার টাকা থেকে কমিয়ে এক হাজার টাকা নির্ধারণ করে। এতে কেজিতে ৫৫ পয়সার মতো দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে সেই প্রভাব নেই; বরং উল্টো দাম বাড়ছে। গত দুই দিন (সোম ও মঙ্গলবার) ঢাকার কয়েকটি খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বোচ্চ খুচরা দর ১৪৬ টাকার লেবেল যুক্ত করে বাজারে প্যাকেট চিনি সরবরাহ করছে কোম্পানিগুলো। এতদিন এ দর ছিল ১৪৪ টাকা। ফলে কেজিপ্রতি ক্রেতাদের অতিরিক্ত দুই টাকা করে বাড়তি মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে গত সোমবার দেশের অন্যতম শীর্ষ চিনি পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান এস আলমের চিনির কারখানায় আগুন লাগার ঘটনায় পাইকারি বাজারে কিছুটা দাম বেড়েছে। গতকাল পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণ চিনিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। অর্থাৎ কেজিতে বেড়েছে ৫০ পয়সা। তবে এটিকে ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ বলছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তাদের ভাষ্য, ভারত থেকে প্রচুর চিনি আসছে। অবৈধভাবে এসব চিনি আসায় সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তবে বাজারে কিছুটা হলেও এসব চিনি ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে।
ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী ও ইয়াসিন স্টোরের মালিক ইয়াসিন বলেন, বাজার সব সময় ওঠানামা করে। বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে চিনির দর অনেক কম। বাংলাদেশে শুল্ক অনেক বেশি। এ কারণে সীমান্ত দিয়ে দেশে অনেক চিনি ঢুকছে। এসব চিনির কারণে দাম এখনও স্থির রয়েছে, নতুবা বাড়ত।
প্যাকেটজাত চিনির দাম দুই টাকা বাড়ানোর বিষয়ে পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর যুক্তি হলো– প্রকৃত অর্থে প্যাকেটের দর বাড়ানো হয়নি। প্রতিকেজি প্যাকেট চিনির দাম ছিল ১৪৮ টাকা। জাতীয় নির্বাচনের কারণে তারা দর কমিয়ে ১৪৪ টাকা নির্ধারণ করেছিল। ফলে তখন তারা যেটুকু ছাড় দিয়েছিল, সেটি এখন পুষিয়ে নিচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চিনি উৎপাদনকারী একটি কোম্পানির এক পরিচালক বলেন, প্যাকেট চিনির দাম আগে থেকেই বাড়তি ছিল। গেল সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারের অনুরোধে পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো কিছুটা কমিয়েছিল। এখন সেটি সমন্বয় করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি আবুল হাশেম বলেন, এস আলমের চিনির কারখানা পুড়ে যাওয়ার একটা প্রভাব বাজারে পড়েছে। ইতোমধ্যে কারখানাটি পুড়ে যাওয়ার খবরে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি মণে ২০ টাকার মতো বেড়েছে।
তাঁর ভাষ্য, কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের একটি সাময়িক প্রভাব পড়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে না। কারণ ভারত থেকে বাজারে কিছু চিনি ঢুকছে, যা দাম নাগালে রাখতে বড় ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে বছরে চিনির চাহিদা রয়েছে প্রায় ২২ লাখ টনের। সর্বশেষ অর্থবছরে দেশে চিনি উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টন। ফলে চাহিদার প্রায় পুরোটাই মেটাতে হয় আমদানির মাধ্যমে। দেশে গড়ে প্রতি মাসে চিনির চাহিদা প্রায় দেড় লাখ টন। তবে রমজানে চাহিদা প্রায় তিন লাখ টন। ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটলে বাজারে এর প্রভাব পড়ে।
ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর সময়ে অপরিশোধিত চিনি আমদানি হয়েছিল ১২ লাখ ৬৮ হাজার ৯০৯ টন। ২০২৩ সালের একই সময়ে আমদানি কমে দাঁড়ায় ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৪৫২ টনে। অর্থাৎ এ সময় আমদানি কম হয়েছে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ৪৫৮ টন।
এদিকে গত ১ মার্চ থেকে সয়াবিন তেলের দাম কমার কথা ছিল। কিন্তু বাজারে এখনও সব কোম্পানির নতুন কম দামের তেলের বোতল আসেনি। তবে পুরোনো বেশি দামের তেল বাজারগুলোতে নতুন কম দরে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও পাড়া-মহল্লার দোকানে সেই দাম এখনও পাচ্ছেন না ভোক্তারা।