শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্কুল ব্যাংকিং সেবার জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে। পাশাপাশি ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির মতো প্রতিবন্ধকতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জানুয়ারি-মে) শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবের মোট আমানত জমা পড়েছে ১১ হাজার ১৬১ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে আমানত জমা পড়েছিলো ১১ হাজার ১১৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় চলতি বছরের পাঁচ মাসে স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানত বেড়েছে ৪৩ কোটি টাকা।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানত জমা পড়েছে ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। এর আগের মাস এপ্রিলে জমা পড়েছিলো ২ হাজার ২৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে এই ব্যাংকিং মাধ্যমে আমানত কমেছে ৪ কোটি টাকা। এছাড়া আগের বছরের একই মাসের তুলনায় আমানত কমেছে ৩৫ কোটি টাকা। ২০২২ সালের মে মাসে স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানত জমা পড়েছিলো ২ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা।
ব্যাংকগুলোতে স্কুল ব্যাংকিংয়ে হিসাব খোলা অব্যাহত রয়েছে। মে মাসে হিসাব খোলার পরিমাণ বাড়লেও আমানতের পরিমাণ আগের মাসের তুলনায় কিছুটা কমেছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সহ দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ব্যাপক অস্থিরতা বিরাজ করছে। এরফলে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ পরিবার আর্থিক সংকটে ভুগছে। ফলে স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মে মাস শেষে মোট স্কুল ব্যাংকিং হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫৬ টি। এরমধ্যে ১৭ লাখ ৩৮ হাজার ৫৩৫টি হিসাব শহরাঞ্চলে এবং ২১ লাখ ১৭ হাজার ৮২১টি হিসাব গ্রামাঞ্চলে খোলা হয়েছে।
সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব ছিলো ৩১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০৬টি। মে মাসে এসে হিসাব দাঁড়িয়েছে ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৩৫৬ টি। অর্থাৎ এই অর্থবছরের এগারো মাসে হিসাব বেড়েছে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ৭৫০টি।
এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বর শেষে স্কুল ব্যাংকিংয়ে হিসাব ছিলো ২৮ লাখ ২৫ হাজার ৯৯২টি। এ সময় আমানতের পরিমাণ ছিলো ২ হাজার ২১৬ কোটি টাকা।
শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে উৎসাহী করতে ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কর্মসূচীর পুনঃপ্রবর্তন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বেশ সফলতা পায় আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব ও আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমে আসছিলো। এরপর থেকেই স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো আকর্ষণীয় মুনাফার নানা স্কিম চালু করে।
এর আগে ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সাল থেকে। প্রথম বছরে ২৯ হাজার ৮০টি স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়। এর পরের বছর ২০১২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুল ব্যাংকিংয়ের আওতায় ব্যাংকগুলোতে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭টি হিসাব খোলা হয়।