দেশে স্কুল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। ব্যাংকগুলোতে এধরনের হিসাব খোলা অব্যাহত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত জমা রাখার পরিমাণ কমছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই হিসাবে জমা পড়েছে ২ হাজার ২২৬ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাবে আমানত জমা পড়েছিলো ২৭ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে জুলাই মাসে স্কুল ব্যাংকিংয়ে ২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা জমা পড়ে। এরপর ধারাবাহিকভাবে আমানত কমতে থাকে। আগস্টে ২ হাজার ৩০৮ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ২৮৭ কোটি টাকা, অক্টোবরে ২ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা, নভেম্বরে ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা জমা পড়ে। এরপরের মাস অর্থাৎ ডিসেম্বরে শিক্ষার্থীদের হিসাবে আমানত কিছুটা বেড়ে ২ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা জমা হয়। তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে এই আমানতে আবারও ভাটা পড়ে। জানুয়ারিতে এই ধরনের হিসাবে ২ হাজার ২২৬ কোটি টাকা জমা পড়ে।
দেশের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী। স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা সঞ্চয়ের অভ্যাস ছেলেমেয়েদের মনে এনে দেবে আর্থিক শৃঙ্খলা, যা তাদের সুশৃঙ্খল জীবন গঠনেও সহায়ক হবে। করোনাকালে স্কুল কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও করোনা পরবর্তীতে এ কার্যক্রম জোরদার করতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন কাজ করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা যায়, ১১ থেকে ১৮ বছর বয়সি অর্থাৎ ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণির আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা তাদের বাবা-মা অথবা বৈধ অভিভাবকের সঙ্গে যৌথ নামে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। মাত্র ১০০ টাকা প্রাথমিক জমা দিয়ে বাংলাদেশের বেশির ভাগ ব্যাংক শাখায় এ হিসাব খোলা যায়। এ হিসাবে কোনো ফি বা চার্জ আরোপ করা হয় না। এমনকি ন্যূনতম স্থিতি রাখার বাধ্যবাধকতাও নেই।
ব্যাংকগুলোতে স্কুল ব্যাংকিংয়ে হিসাব খোলা অব্যাহত রয়েছে। ফলে জানুয়ারিতে হিসাব খোলার পরিমাণ আগের চেয়ে বেড়েছে। সেই হারে আমানত বাড়ছে না। এছাড়া রেমিট্যান্স কমার কারণে চাপ বাড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এতে ধারাবাহিকভাবে কমছে রিজার্ভ। তবে রোজার শুরুতে রেমিট্যান্সে কিছুটা উত্থান দেখা গেছে। একই সঙ্গে দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতির ব্যাপক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ পরিবার আর্থিক সংকটে ভুগছে। ফলে স্কুল ব্যাংকিংয়ে আমানতের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে কমছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ব্যাংকে শিক্ষার্থীদের হিসাব ছিলো ৩১ লাখ ৮৯ হাজার ৬০৬টি। আগস্টে এ ধরনের হিসাব খোলা হয় ৩১ লাখ ৮২ হাজার ৬৬১টি। এরপরে সেপ্টেম্বরে এসে স্কুল ব্যাংকিংয়ের হিসাবের পরিমাণ আরও কমে দাড়ায় ৩১ লাখ ৮১ হাজার ৮৬০টি। তবে ডিসেম্বর শেষে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ লাখ ৬০৪টি। জানুয়ারিতে হিসাব আরও বেড়ে দাড়ায় ৩২ লাখ ১৫ হাজার ৫৮৬টি।