ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ব্যস্ত সময় পার করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নরেন্দ্র মোদির টানা তৃতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশে নয়াদিল্লি গেলেও শেখ হাসিনা ভারতসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করেছেন। শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের যোগ দেওয়া মিলনমেলাকে কূটনীতিকভাবে কাজে লাগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। জওহরলাল নেহেরুর পর প্রথম কোন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্তে সংক্ষিপ্ত বৈঠকে শেখ হাসিনা দুই দেশের সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নেওয়ার বার্তা দেন। একইসঙ্গে সুবিধাজনক সময়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা। তিনদিনের ব্যস্ত সফর শেষে সোমবার সন্ধ্যায় দেশে ফিরছেন শেখ হাসিনা।
নরেন্দ্র মোদি ছাড়াও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির সাক্ষাত এবং অন্যান্য দেশের সরকারপ্রধানদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। মূলত নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণের আমন্ত্রণে দিল্লি গেলেও প্রধানমন্ত্রী আঞ্চলিক দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আলোচনার সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন পুরোপুরি। এছাড়া কংগ্রেস চেয়ারপারসন সোনিয়া গান্ধী, রাহুল ও প্রিয়িংকা গান্ধীও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন।
নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানের পর রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে নৈশভোজের আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্তে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাত করেন শেখ হাসিনা। এই সময়ে দুই নেতাই নিজেদের সম্পর্কের ভিতকে আরও দৃঢ় করার অঙ্গীকার করেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, বর্তমানে সময়ে দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছছে।
সোমবার সকালে শেখ হাসিনার আবাসস্থলে শ্রীলঙ্কা প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহ সাক্ষাত করেন। এই সময়ে প্রধানমন্ত্রী ভাতৃপ্রতীম দু’দেশের স্বার্থে বাংলাদেশের পর্যটন খাতে শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ চেয়েছেন। এই বৈঠকে পর্যটন খাতে এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার বিনিয়োগ বাংলাদেশের পর্যটন খাতে কীভাবে আসতে পারে তা নিয়ে দু’নেতা আলাপ আলোচনা করেন। এছাড়া ‘দু’নেতা কৃষি এবং সমুদ্রে জাহাজ চলাচল সম্পর্কিত পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট তার দেশের সংকটময় মুহুর্তে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। জবাবে বিক্রমাসিংহে বলেন, বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে তার আকাঙ্খা আছে, তবে সামনে তার দেশে নির্বাচন।
একইদিনে ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর আবাসস্থলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। এই সময়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জয়শঙ্কর বন্ধুপ্রতীম দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তাঁরা আগামী দিনে এ সম্পর্ককে আরও উন্নীত করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সাক্ষাতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের মন্ত্রী হওয়ার জন্য জয়শঙ্করকে অভিনন্দন জানান এবং তাঁকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। এই সময়ে জয়শঙ্কর বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আইটিসি মৌর্য হোটেলে সাক্ষাৎ করেন ভারতের পার্লামেন্টের রাজ্যসভা সদস্য ও কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টির চেয়ারপার্সন সোনিয়া গান্ধী, তার পুত্র ও লোকসভার বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী এবং কন্যা ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে গান্ধী পরিবারের সাথে এ সময় একান্তে আলোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনার আবাসস্থল নয়াদিল্লির আইটিসি মৌর্য হোটেলে এইসব সাক্ষাত অনুষ্ঠিত হয়। সকালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি সাংবাদিকদের কাছে শেখ হাসিনার বিভিন্ন সাক্ষাতের খুঁটিনাটি তুলে ধরেন। এই সময়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, ভারতের নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমূল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আগামী দিনগুলোতে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও গভীর হবে বলে ভারত ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন। দুই নেতার একান্তে আলাপে এই আশা প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, অত্যন্ত উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তার সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির বিচক্ষণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এক নতুন উচ্চতায় আসীন হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই নেতা পরে রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর দেওয়া ভোজসভায় অংশ নেন। পরস্পরের প্রতি প্রত্যাশার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, দুই দেশের মধ্যে অনেক বিষয় জড়িত। একসঙ্গে কাজ করার কিছু সুফল রয়েছে। তিনি বলেন, দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মাধ্যমে যোগাযোগসহ উভয় দেশের জনগণ নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের বহুমুখী গভীর সম্পর্ক আরও সম্প্রসারণ হবে এবং এটি আরও গভীর হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে দ্বি-পাক্ষিক বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ হয়েছে। সে দেশের চরম অর্থনৈতিক ক্রান্তিকালে বাংলাদেশের সহায়তার জন্য রনিল বিক্রমাসিংহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়েছেন। কৃষিখাতে বাংলাদেশের প্রযুক্তি এবং পর্যটনখাতে শ্রীলঙ্কার দক্ষতা ও বিনিয়োগগত সহযোগিতা নিয়ে আলোচনার কথাও জানান হাছান।