মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো গণহত্যার বিচার চেয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যে মামলা করা হয়েছে সেই মামলা পরিচালনার জন্য মুসলিম বিশ্বের সহযোগিতামূলক সংগঠন ওআইসির সদস্যদের কাছে অর্থ চাওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট এবং ওআইসির মহাসচিব যৌথ এক চিঠিতে এই অর্থ দেওয়ার আহ্বান জানান।
রোববার (২৮ মে) দুপুরে ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ওআইসির মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের এই কথা জানিয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার চেয়ে মামলা করেছে গাম্বিয়া। মামলাটি বিচারাধীন রয়েছে। সেই মামলা পরিচালনার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। গাম্বিয়ার একার পক্ষে সেই অর্থ যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। এছাড়া ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার চাপ বহন করা বাংলাদেশের পক্ষেও সম্ভব নয়। এজন্য ওআইসিভুক্ত দেশগুলোর কাছে এই অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
ওআইসি মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাসহ অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। বিশেষ করে মুসলমানদের আরও সংহত হতে হবে, শক্তিশালী অবস্থান নিতে হবে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। খামোখা অভিযুক্ত করা হচ্ছে। কিন্তু এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও তারা (বিশ্ব সম্প্রদায়) নেন না। আমরা ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের কথা বলেছি।
মন্ত্রী বলেন, মুসলিম দেশগুলোতে যথেষ্ট সম্পদ আছে। এ ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারলে আমাদের আরও বেশি উন্নতি হবে।
ওআইসি মহাসচিবের আগমন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি এখানে এসেছেন আমাদের আমন্ত্রণে। রোহিঙ্গাদের অবস্থা দেখতে যাবেন। রোহিঙ্গাদের দুরবস্থা দূর করতে বহুদিন ধরে তারা নেতৃত্বাস্থানীয় ভূমিকা রেখে আসছে। যেকোনো সম্মেলনে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনায় তারা নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। এমনকি জাতিসংঘেও যে প্রস্তাব পাস হয়েছে, সেখানেও নেতৃত্বাস্থানীয় ভূমিকা রেখেছে ওআইসি।
বাংলাদেশ সফরের কারণ হিসেবে ওআইসির মহাসচিব রোহিঙ্গা ইস্যু এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির (আইইউটি) সমাবর্তনের কথা উল্লেখ করেন। তাহা বলেন, ওআইসির সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য বাংলাদেশ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ। সেই লক্ষ্যে আমি এখানে এসেছি। আমি এসেছি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিতে। কেননা, রোহিঙ্গাদের অভাবনীয় সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। আমরা ওআইসির সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ধন্যবাদ দিতে চাই।
ওআইসি মহাসচিব বলেন, রোহিঙ্গারা মুসলিম। তারা শান্তি পাওয়ার অধিকার রাখে, নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রাখে। তারা ভালো জীবন পাওয়ার অধিকার রাখে।
বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, আইইউটির কর্মকাণ্ড দেখতে এসেছি। এখানে ওআইসিভুক্ত বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়ছে। সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করছে। এজন্য আমি শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।