দীর্ঘদিন ধরে দেশে ডলার সংকট রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগের আমলে দেশের ব্যাংক খাতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। এতেই মূলত বৈদেশিক মুদ্রার ডলারের ব্যাপক পতন হয়েছে। এরপর গত ৫ আগস্ট দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে রিজার্ভ ও ডলারের দর কিছুটা স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশে প্রবাসী আয় বাড়ছে। একইসঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে রফতানি আয়। এতে দেশের অর্থনীতি কিছুটা স্বস্তি ফিরে পেয়েছে।
এদিকে গত কয়েক বছর ধরে ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরণের অবমূল্যায়ন হয়েছে। এখন ব্যাংকগুলো প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে।
ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও। ২০২১ সালের অগাস্টে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সংকটের কারণে সেটি এখন বিশ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পৌনে দুই বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে রিজার্ভে হাত না দিয়ে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, দেশের অর্থনীতি ছিল বিপর্যস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে। আশার কথা এই রিজার্ভ পরিস্থিতি এখন উন্নতির পথে।
ড. ইউনূস বলেন, গত তিন মাসে রিজার্ভে কোনোরকম হাত না দিয়েই আমরা প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে পেরেছি। জ্বালানি তেল আমদানিতে পুঞ্জীভূত বকেয়ার পরিমাণ ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার থেকে কমিয়ে ১৬০ মিলিয়ন ডলারে আনতে পেরেছি।
গত ৫ আগস্টের পর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশি করে ডলার পাঠাচ্ছেন। এর ফলে ডলারের বাজার স্থিতিশীল রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মাস নভেম্বরের ১৬ দিনে এসেছে ১২৫ কোটি ৫১ লাখ ডলারের বেশি রেমিট্যান্স। সেপ্টেম্বরের পুরো সময়ে ২৪০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসীরা। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১২০ টাকা ধরে যার পরিমাণ ২৮ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকার বেশি। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশে ১৯০ কোটি মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
এর আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২০২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে।
জুলাই-আগস্ট মাসে উৎপাদন খাতে যে ধাক্কা লেগেছিল, তা কাটিয়ে দেশের পণ্য রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। গত অক্টোবরে রপ্তানি আয় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১১ শতাংশ বেশি।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তিনটি বড় উৎস হলো রপ্তানি, প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এবং বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণ। রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কমে। অক্টোবরে প্রবাসী আয় বেড়েছে ২১ শতাংশ।
রপ্তানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধি, বিপরীতে আমদানি ব্যয় সেভাবে না বাড়ায় সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি দূর হয়েছে। আর্থিক হিসাবে ঘাটতি কমছে।