রাজস্ব সংগ্রহের অবকাঠামোগত ও লজিস্টিক সহায়তা বৃদ্ধি করে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করতে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নিয়ে পৃথক রাজস্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠার দাবি করা হয়েছে প্রথমবারের মতো আয়োজিত রাজস্ব সম্মেলনে।
রোববার ‘জাতীয় উন্নয়নে ভ্যাটের ভূমিকা : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে চট্টগ্রাম ভ্যাটের কমিশনার সৈয়দ মুশফিকুর রহমান এমন দাবি উত্থাপন করেন।
তিনি বলেন, পার্শ্ববর্তী দেশের তুলনায় কম খরচে রাজস্ব আদায় করছে এনবিআর। ১০০ টাকার রাজস্ব আদায়ে গড়ে খরচ হয় ২২ পয়সা। পক্ষান্তরে ভারতে ৬০ পয়সা ও জাপানে এক টাকা ৭০ পয়সা লাগে। অথচ এনবিআরের মাঠ পর্যায়ে নিজস্ব স্থাপনা নেই। যানবাহনেরও সংকট আছে। রাজস্ব আদায় বাড়াতে এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে।
মুশফিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে যে ধরনের আর্থিক প্রস্তাব, জনবল নিয়োগ, গাড়ি কেনা, গাড়ি ভাড়া, অফিস ভাড়া, লজিস্টিক ও প্রশাসনিক কাজের জন্য আইআরডির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। এতে অনেক কালক্ষেপণ হয়। যেহেতু আইআরডির সচিব পদাধিকারবলে এনবিআর চেয়ারম্যান সেহেতু আইআরডি ও এনবিআরকে একীভূত করে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজস্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
প্রথম দিনের সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে রাজস্ব আহরণের বেশিরভাগই হচ্ছে ভ্যাট থেকে। নতুন ভ্যাট আইন প্রবর্তনের পর থেকে ভ্যাট আদায়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে ভ্যাটের বিষয়ে বিভিন্ন সময়েই আদালতে মামলা হয়। অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকায় এ ধরনের জটিলতা তৈরি হয়, তা নিরসনে কাজ করতে হবে।
এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বলেন, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে ভ্যাট ব্যবস্থা চালু হলেও ২০১২ সালে নতুন আইন প্রণয়নের পর কার্যকরভাবে ভ্যাট আদায় বাড়তে পারে। ২০১৯ সালের পর গতি পায়। সে হিসেবে ভ্যাটের জাল বৃদ্ধির জায়গায় আমরা খুব পিছিয়ে আছি তা বলা যাবে না। অবশ্যই ভ্যাটের বাইরে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে। তাদের ভ্যাট জালে আনার চেষ্টা চলছে। আগামী মার্চ মাস থেকে খুচরা পর্যায়ে ভ্যাট আদায় নিশ্চিত করতে ৩ লাখ ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস মেশিন স্থাপনের কাজ শুরু হবে।
করদাতা সনাক্তে শুমারির দাবি জানিয়ে রাজস্ব সম্মেলনে এফবিসিসিআই’য়ের সহ-সভাপতি মোস্তফা আজাদ বাবু বলেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাট অফিস স্থাপন করা জরুরি। সারা দেশে ৬ কোটি মানুষ হোল্ডিং ট্যাক্স প্রদান করে। অথচ মাত্র ৭০ লাখ টিআইএনধারী, যাদের মধ্যে মাত্র ৩০ লাখ আয়কর প্রদান করে। আমার প্রস্তাব হলো আদমশুমারির মতো করদাতা সনাক্তে শুমারি করা। তাহলে বাজেটের আকার ১০ লাখ কোটি টাকা দেওয়া সম্ভব।
রাজস্ব প্রদানে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও রাজস্ববান্ধব মানসিকতা বিকাশের উদ্দেশ্যে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রাজস্ব সম্মেলন ও নতুন ভবন উদ্বোধন করেন।