রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনে গড়ে ৪২ শতাংশ ভোটার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। এরমধ্যে রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনে ৪৬ শতাংশ, রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ২০ শতাংশ, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে ৪০ শতাংশ, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে ৫৩ শতাংশ, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে ৪৬ শতাংশ এবং রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে।
রোববার (৭ জানুয়ারি) ভোটগ্রহণ শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এতথ্য জানা গেছে।
রাজশাহী সদরের ভোটকেন্দ্রগুলোতে সারাদিনই ছিল ভোটারের খরা। গ্রামের আসনগুলোতে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভোটার উপস্থিতি কম থাকলেও পরে তা বাড়তে থাকে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া রাজশাহীতে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো প্রার্থীর পক্ষ থেকে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তোলা হয়নি। কেউ নির্বাচন বর্জনেরও ঘোষণা দেননি। তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিপক্ষে কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন।
সকাল সাড়ে ৭টায় পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, প্রিজাইডিং অফিসার কে এম গোলাম মোস্তফা ভোটকক্ষ ঘুরে ঘুরে প্রার্থীর এজেন্টদের ফাঁকা ব্যালট বাক্স দেখাচ্ছেন। বাক্স ফাঁকা আছে কি না তা তিনি ভালোভাবে দেখে নিতে বলছেন। সকালে এ কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরুর পর একজন-দুজন করে ভোটারকে আসতে দেখা যায়।
সকাল ৯টায় দুর্গাপুর উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়েও দেখা যায় একই চিত্র। এ কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার নজরুল ইসলাম জানান, এখানে ভোটার আছেন ৩ হাজার ২২৫ জন। এই কেন্দ্রে শুধু নৌকার প্রার্থী আবদুল ওয়াদুদ দারা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী ওবায়দুর রহমানের এজেন্ট পাওয়া গেছে। প্রিজাইডিং অফিসার জানান, এ আসনে আরও চারজন প্রার্থী থাকলেও তাদের এজেন্ট আসেননি।
সকাল ১০টায় আমগাছি সাহারবানু উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিজাইডিং অফিসার রবিউল ইসলাম জানান, এখানেও আওয়ামী লীগের নৌকা ও স্বতন্ত্রের ঈগল ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের এজেন্ট আসেননি।
দুপুরের পর রাজশাহীর গ্রামের ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি বাড়তে শুরু করে। তবে ব্যতিক্রম থাকে রাজশাহী শহর। দুপুর ১টায় নগরীর হোসনীগঞ্জ বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, ৪ হাজার ৪০৮ জন ভোটারেরর মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৭৩৫ জন।
এই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার অফিসার আসফাকুল আসেকিন বলেন, ‘সকালে ব্যালট এসেছে। কোনো রকম ঝামেলা হয়নি। গোলযোগও হয়নি। তাও ভোটার উপস্থিতি কম।’
রাজশাহী শহরের কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে নৌকার প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ফজলে হোসেন বাদশা ও আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী শফিকুর রহমান বাদশার এজেন্ট ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি। অন্য প্রার্থীরা এজেন্ট দেননি বলে প্রিজাইডিং অফিসাররা জানিয়েছেন। রাজশাহীর অন্যান্য আসনগুলোতেও একই অবস্থা দেখা গেছে।
রাজশাহী-১ আসনের প্রার্থী চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহি ভোটের মাঠে ঝড় তুললেও সব কেন্দ্রে তার এজেন্ট পাওয়া যায়নি। অন্য দলগুলোর মধ্যে শুধু বিএনএমের কিছু এজেন্ট ভোটকেন্দ্রে দেখা গেছে।
রাজশাহী মহানগর ও ৯ উপজেলায় ৭৭০টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়। রাজশাহী-৪ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও বর্তমান এমপি এনামুল হক সকালে ভোট দিয়ে অভিযোগ করেন, কিছু কেন্দ্রে তার এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এছাড়া অন্য প্রার্থীদের পক্ষ থেকে তেমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
ভোট চলাকালে দুর্গাপুর উপজেলার হাটকানপাড়া স্কুলের ভোটকেন্দ্রে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে পুলিশ ধাওয়া দিয়ে দুই পক্ষকেই সরিয়ে দেয়। বাঘা উপজেলার খাগড়বাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে অন্যজনের ভোট দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগে মো. মহিবুল নামের এক ব্যক্তিকে পুলিশে সোপর্দ করেছেন প্রিসাইডিং অফিসার সাওদ উল হক। মহিবুল রাজশাহী-৬ আসনের নৌকার প্রার্থীর সমর্থক। অন্য কোথাও কোন বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
রাজশাহীর রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম আহমেদ বলেন, ‘অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন হয়েছে। কোথাও কোনো অনিয়ম হয়নি। গণনা শেষে সুন্দরভাবে ফল প্রকাশ হলেই স্বস্তি।’