রংপুরে দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নতুন করে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ৭ জন। এর ফলে এই হাসপাতালে বর্তমানে এই রোগে আক্রন্ত হয়ে চিকিৎসাধীন রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ জনে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, রংপুরে চিকিৎসাধীন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা ঈদে ঢাকা থেকে আসা মানুষজন।
এদিকে, ডেঙ্গু চিকিৎসায় রমেকে আলাদা ওয়ার্ড না থাকলেও হঠাৎ এক রোগীর মৃত্যুতে কিছুটা তৎপর হয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রমেকের নতুন ভবনের দ্বিতীয় তলার মেডিসিন ওয়ার্ডের ৩ নম্বর এবং ৬ নম্বর ইউনিটের কর্ণার অংশে চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন হাসপাতালটিতে গিয়ে দেখা যায়, সাধারণ রোগীদের ইউনিটের পাশেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীর চিকিৎসায় কাঙ্ক্ষিত সেবা না পাওয়া ও আলাদা ব্যবস্থায় চিকিৎসার কথা বলছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তবে আলাদা ইউনিট স্থাপনের কাজ চলছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল প্রশাসন।
ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য আলাদা ওয়ার্ড না করায় আতঙ্কে আছেন রামেকে চিকিৎসা নিতে আসা অন্য রোগী ও তাদের স্বজনরা।
হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা খন্দকার রিয়াজুল ইসলাম নামে এক রোগীর স্বজনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, সামান্য একটা মশারি দিয়ে রোগীদের রাখা হয়েছে। খুব বেশি নিরাপদ চিকিৎসা ব্যবস্থা নেই। ডেঙ্গু জ্বর যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, সে বিষয়ে তৎপরতা নেই বললেই চলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রেহেনা পারভীন নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, যেহেতু আমার রোগীর ডেঙ্গু হয়েছে, তাকে যদি আলাদা করে রাখা হতো তাহলে ভালো হতো। কারণ সে ঘুমাতে পারছে না। শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করছে। এখানে তো আরও রোগী ভর্তি আছেন। আলাদা ওয়ার্ড হলে চিকিৎসাটাও আরও ভালো হতো।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (৪ জুলাই) সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যাওয়া বুলেট লাল নগরীর পুরাতন সদর হাসপাতাল কলোনীর বাসিন্দা ছিলেন। তিনি ঢাকার একটি সরকারি দপ্তরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। ঈদের ছুটিতে বাড়ি এসেই জ্বরে আক্রান্ত হন তিনি। পরে পরীক্ষা করে জানা যায়, তিনি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে তিনি মারা যান।
কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট ও নীলফামারীসহ রংপুর নগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা চিকিৎসারত ডেঙ্গু রোগীদের অভিযোগ, হাসপাতালে চিকিৎসা মিললেও কাঙ্ক্ষিত সেবা পাচ্ছেন না তারা।
সুরুজ্জামাল নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী বলেন, ঢাকা থেকে ঈদের ছুটিতে এসেছিলাম। এখন ডেঙ্গু জ্বর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আছি। কয়েকদিন ধরে কিছু খেতে পারছি না, পুরো শরীরে ব্যথা। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে একটু ভালো আছি। তবে চিকিৎসাসেবা আরও উন্নত হওয়া দরকার ছিল।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মাহফুজ রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেকে নতুন করে ৭ রোগী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৬ জন। আক্রান্ত রোগীদের সবাই ঢাকা থেকে ঈদ করতে আসা মানুষ। রমেকে ভর্তি হওয়া এসব রোগীর মধ্যে রংপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করা মানুষ নেই বললেই চলে। রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।
রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগ শুধু রংপুর অঞ্চলে না সাড়া দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। এখন আরও প্রকট আকার ধারণ করছে। হাসপাতালে যারা চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের কাছ থেকে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। যদি কেউ অভিযোগ করেন তাহলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। ডেঙ্গু রোগীদের বিশেষ নজরে রাখারও আশ্বাস দেন তিনি।
ডেঙ্গু প্রসঙ্গে রংপুর সিটি করপোরেশনর মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, মশার উপদ্রব কমাতে সিটি করপোরেশন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মশকনিধন স্প্রে চালু রয়েছে। তবে, বর্ষার কারণে কিছু কিছু জায়গায় কার্যক্রম আপাতত বন্ধ। তবে ঢাকার মতো রংপুরে যেহেতু ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে, আমরা দ্রুত সব জায়গায় মশা নিধন স্প্রে দেওয়া শুরু করবো