রমজানের আগেই মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়ছে খেজুরের বাজারে। অজুহাত হিসেবে বলা হচ্ছে বৈশ্বিক পরিস্থিতি, ডলারের সংকট ও এলসি খোলার বিড়ম্বনার কথা। দু’মাসের ব্যবধানে বিভিন্ন জাতের খেজুরের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় দেড়শো টাকা।
খেজুর ছাড়া ইফতারির কথা ভাবাই যায় না। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি। সারা বছরে খেজুরের চাহিদা দেড় লাখ টন। রমজান মাসেই প্রয়োজন হয় এর এক তৃতীয়াংশ। আমদানি কম হওয়ায় ২ মাসের ব্যবধানে মানভেদে খেজুরের দাম বেড়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। খুচরা দোকানিরা দাম বৃদ্ধির জন্যে পাইকার ও আমদানিকারকদের দুষছেন। বাজারের লাগাম টেনে ধরার দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা। একজন ক্রেতা বলেন, খেজুরের দাম বাড়তি বলে আগেই কিনে রাখছেন। তবে, ১ কেজি খেজুরের দাম ৪০০ বা তার বেশি হলে মানুষ কীভাবে কিনবে!
একজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, যে খেজুর বিক্রি করেছেন ৪শ’ টাকায়, এখন সেটারই মূল্য ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা। আরেক বিক্রেতা জানান, খেজুরের দাম সামনে আরও বাড়বে।
রাজধানীর বাদামতলী থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয় খেজুর। প্রতি কেজি মেদজুল খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ১৫০০ টাকায়; পাইকারি পর্যায়ে যার দাম ৬৪০ থেকে ১২০০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মরিয়ম ও মাবরুম খেজুর ৮০০, আম্বর ৯০০, আজওয়া ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি এবং এলসি জটিলতায় দাম বেড়েছে। একজন পাইকার বলেন, খেজুরের দাম বেশি বলে আমাদের বিক্রি হচ্ছে অনেক কম। এক একটা কার্টনে দেখা যাচ্ছে, বাড়তি মূল্যই আছে ১ হাজারের বেশি।
রমজানে প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানীতে এলসি সহজ করতে, নির্দশেনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে আমদানীকারকরা বলছেন, চাহিদা অনুযায়ী এলসি খুলতে পারছেন না। বাংলাদেশ ফ্রুটস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম বলেন, এখন আর আমাদের কোনো সমস্যা নেই। খেজুরের দাম স্বাভাবিক থাকবে। চট্টগ্রাম বন্দরে লোড-আনলোড না থাকলে, যানজট না থাকলে বাজার স্বাভাবিক থাকবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, সরকারের পক্ষ থেকে আমদানি করা হয় না। এ জন্য মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে সিন্ডিকেট। ক্রেতাদের কিছুটা সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান। তিনি বলেন, সরকারি পর্যায়ে আমদানি এখন হয় না। বেসরকারি আমদানি যাতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে হয়, সেদিকেই নজর দেয়া দরকার। এবং, যারা আমদানি করছে তারা যেন অতিরিক্ত মুনাফা করতে না পারে সেদিকেও মনিটর করা উচিত।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বলছে, আমদানির ক্ষেত্রে প্রায় ২৫ শতাংশ ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন ঘটেছে। বাজার ব্যবস্থপনায় কোথাও নৈরাজ্য তৈরি হচ্ছে কিনা, তা খতিয়ে দেখবে সংস্থাটি। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে আমদানির ক্ষেত্রে। গত বছরের সমান দাম থাকলেও ব্যবসায়ীরা তাদের আমদানির খরচ অনুযায়ী লোকসানে বিক্রি করবে না। আমাদের মনিটরিংয়ের মধ্যে থাকবে, ব্যবসায়ীরা কী পরিমাণ আমদানি করলো এবং অতিরিক্ত মুনাফা করলো কিনা তা খতিয়ে দেখা।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, চাহিদার তুলনায় খেজুরের আমদানি কমেছে। নভেম্বর থেকে জানুয়ারি এই তিন মাসে আমদানি হয়েছে ২২ হাজার টন। যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ কম।