বকেয়ার কারণে কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় বন্ধ হয়ে যাওয়া পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি আগামী রবিবার থেকে আবার শুরু করবে বিদ্যুৎ উৎপাদন। এর ফলে চলমান লোডশেডিং অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
দুই ইউনিটের ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রটির মালিক বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে গঠিত বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ এম খোরশেদুল আলম দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমদানিকৃত কয়লা দেশে এসে পৌঁছেছে। আশা করছি ২৫ জুন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে।’
ইন্দোনেশিয়া থেকে ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে একটি জাহাজ গতকাল বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছে। জাহাজ থেকে কয়লা খালাশ করে বিদ্যুৎকেন্দ্রে পৌঁছানো এবং জ্বালানি লোড করে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করতে ৪৮-৭২ ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
২০২০ সালে কেন্দ্রটি চালু হওয়ার পর থেকে একদিনের জন্যও এটি বন্ধ হয়নি।কেন্দ্রটিকে দেশের মডেল বিদ্যুৎকেন্দ্র হিসেবেও বিবেচনা করা হয়।
ডলার সংকটে যথাসময়ে কয়লা আমদানি ব্যাহত হওয়ায় গত ২৫ মে দেশের সবচেয়ে বড় এবং নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট এবং ৫ জুন দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় লোডশেডিং বেড়ে যায়। বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণ করতে গিয়ে সরকার সারকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে এবং কমিয়ে তা বিদ্যুৎকেন্দ্রে দেয়। এতে তিনটি সারকারখানা বন্ধের পাশাপাশি দুটিতে উৎপাদন কমে এসেছে।
কেন্দ্রটি বন্ধের পর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সবাইকে ধৈর্র্য ধরার অনুরোধ জানিয়ে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি পরিবর্তনের আশ্বাস দেন।
সূত্র জানায়, সব মিলে প্রায় আড়াইশ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করার কারণে আপাতত পায়রায় কয়লা নিয়ে সংকট হবে না। আগামী ২৬ জুন সোমবার আরও ৪৫ হাজার মেট্রিক টন কয়লা এসে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এভাবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত ১৭টি জাহাজে ৭ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আনার সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। পর্যাপ্ত মজুদ থাকতেই নতুন কয়লার জাহাজ এসে পৌঁছাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন অব্যাহত রাখতে আরও কয়লা আনার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
পিডিবির একটি সূত্র জানায়, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হওয়ার পর এটি থেকে জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ৫২৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে। কয়লা মজুদ থাকলেও কারিগরি কারণে, দ্বিতীয় ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু হবে ২ জুলাই থেকে। ওইদিন থেকে জাতীয় গ্রিডে ৭৪৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হতে পারে। ঈদের ছুটির কারণে তখন চাহিদা কম হওয়ায় লোডশেডিং থাকবে না বলেই আশা করছেন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্নভাবে গড়ে প্রতিদিন ১২৪৪ মেগাওয়াট করে প্রায় তিন কোটি ইউনিট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল কেন্দ্রটি। প্রতি মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯০ কোটি ইউনিট।
কর্মকর্তারা জানান, কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এই সুযোগে কেন্দ্রের মেইনটেনেন্সের কাজ শেষ করা হয়েছে। এতে দীর্ঘদিন আর মেইনটেনেন্স করা লাগবে না।