পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পিটিআই নেতা ইমরান খানকে গ্রেপ্তার করার পরই দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তার দলের কর্মীরা। বিভিন্ন জায়গায় সেই বিক্ষোভ রীতিমতো সহিংস ছিল। ইমরানের দলের কর্মীদের রাগ গিয়ে পড়েছে সেনাবাহিনীর উপরে। রাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন শহর রণক্ষেত্রর চেহারা নেয়।
পিটিআই সমর্থকরা রাওয়ালপিন্ডিতে সেনার সদরদফতরে ঢুকে পড়েছিল। লাহোরে তারা কোর কম্যান্ডারের বাড়িতে ঢুকে যায়। করাচি ও পেশোয়ারেও সেনার শিবিরের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। পাকিস্তানে সাম্প্রতিককালে এভাবে সেনার বিরুদ্ধে এভাবে বিক্ষোভ দেখানো হয়নি।
সংবাদপত্র ডন জানাচ্ছে, ইমরানের ভাতিজা বা ভাইপো হাসান নিয়াজি বলেছেন, ‘প্রতিবাদকারীরা সেনার শিবির ঘিরে বসে থাকবেন।’ তিনি জানিয়েছেন, ‘মানুষ এতটাই রেগে আছে যে, পিটিআই কর্মীরা তাদের থামাতে পারছে না।’
করাচিতে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। লাহোর, করাচি, ইসলামাবাদ-সহ পাকিস্তানের প্রায় সব শহরে ইমরানের দলের কর্মীরা রাস্তায় নেমে পড়েন। তারা বলতে থাকেন, নেতার গায়ে যদি কোনোভাবে হাত পড়ে, তাহলে তারা দরকার হলে জীবন দিয়ে দেবেন।
বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের সঙ্গে পিটিআই কর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। অনেক জায়গায় আগুন ধরানো হয়েছে। কিছু জায়গায় পুলিশ লাঠি ও গ্যাস ব্যবহার করে কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে চেয়েছে। গুলিও চালিয়েছে। কোয়েটায় পুলিশের গুলিতে একজন পিটিআই কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। সেখানেও প্রবল বিক্ষোভ দেখিয়েছেন পিটিআই কর্মীরা। পিটিআই কর্মীরা প্রচুর সরকারি বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে। অনেক জায়গায় আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়েছে।
পাকিস্তানের পরিকল্পনামন্ত্রী আহসান ইকবাল বলেছেন, ‘পিটিআই কর্মীরা আর রাজনৈতিক কর্মী নন, তারা জঙ্গিতে পরিণত হয়েছেন।’
পিটিআইয়ের তরফ থেকে বলা হয়েছে, বুধবার সকালে যেন ইসলামাবাদ আদালত চত্বরে কর্মীরা জমায়েত হন। আর সারা দেশে অবস্থান-বিক্ষোভ চলতে থাকবে। ইমরান খানকে যতদিন মুক্তি দেয়া না হচ্ছে, ততদিন এই বিক্ষোভ চলবে।
করাচিতে দলের সভাপতি আওয়াব আলভি জানিয়েছেন, করাচি-জুড়ে বিক্ষোভ চলতে থাকবে। তিনি দলের সব কর্মীকে সেই বিক্ষোভে যোগ দিতে বলেছেন।
জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে একটা দুর্নীতির মামলায় ইমরান খানকে ইসলামাবাদ হাইকোর্ট চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ইমরান যখন আদালতে প্রবেশের জন্য বায়োমেট্রিক দিচ্ছিলেন, তখন আধাসামরিক বাহিনী একটা জানালার কাচ ভেঙে ভিতরে ঢুকে তাকে গ্রেপ্তার করে। ইমরান তখন শান্ত হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ইমরানের বিরুদ্ধে অভিয়োগ, তিনি আল কাদির ট্রাস্টের জমি দখল করেছেন। এই নিয়ে ইমরানের বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছিল। ইমরান সেই মামলার জামিন নেয়ার জন্যই ইসলামাবাদ হাইকোর্টে গিয়েছিলেন।
ইমরান আগে থেকে একটা ভিডিও বার্তা রেকর্ড করেছিলেন। তাকে গ্রেপ্তার করার পর সেটা সামাজিক মাধ্যমে দলের তরফ থেকে দেয়া হয়। সেখানে ইমরান বলেছেন, ‘আপনারা যখন এই কথাগুলো শুনবেন, তখন আমাকে আটক করা হয়ে গেছে। মিথ্যা অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পাকিস্তানের সংবিধান ভঙ্গ করা হচ্ছে।’
ইমরানের দাবি, ‘আমি আইন মেনে চলেছি এবং চলি। আমাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে যাতে আমি রাজনৈতিক পথে হাঁটতে না পারি এবং দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন না করতে পারি।’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, এপি, এএফপি, রয়টার্স, ড্য ডন নিউজ, জিও টিভি