পুঁজিবাজারের ব্লুচিপ কোম্পানি ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি লোকসানের পড়েছে। কোম্পানিটি চলতি হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে তথা ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ে প্রথমবারের মতো লোকসান দিয়েছে। আলোচিত প্রান্তিকে কোম্পানিটির ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ১ টাকা ২৮ পয়সা মুনাফা করেছিল। আগের বছর একই সময়ে শেয়ারর প্রতি আয় বা ইপিএস হয়েছিল ৯ টাকা ২৮ পয়সা। আর তার আগের বছর প্রথম প্রান্তিকে ইপিএস ছিল ১৩ টাকা ২৬ পয়সা।
আলোচিত সময়ে কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ৪৬ কোটি ৯ লাখ টাকা, যেখানে আগের বছর একই সময়ে ২৮০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা নিট মুনাফা হয়েছিল।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ দেশের সবচেয়ে বড় ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি। সর্বোচ্চ বাজারমূলধনের দিক দিয়ে পুঁজিবাজারের ৩৬৪টি কোম্পানির মধ্যে ওয়ালটনের অবস্থান দ্বিতীয়। আজ ৭ নভেম্বর ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে কোম্পানিটির বাজারমূলধন বা মার্কেট ক্যাপিটাল ছিল ৩১ হাজার ৭৩৭ কোটি টাকা। এদিন প্রথম স্থানে থাকা গ্রামীণফোন বা জিপি’র বাজারমূলধন ছিল ৩৮ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা।
ওয়ালটনের মতো হাই-প্রোফাইল কোম্পানির লোকসানের খবর পুঁজিবাজারে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। চলছে নানামুখী আলোচনা। জানা গেছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের প্রকৃত আয় কমে গেছে। এ কারণে আলোচিত প্রান্তিকে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রির পরিমাণ কমেছে। অন্যদিকে টাকার বিপরীতে ডলারের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় বেড়েছে কোম্পানিটির ব্যয়। আর তাতেই প্রথমবারের মতো লোকসানে পড়েছে কোম্পানিটি।
ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি প্রায় ১৪ শতাংশ কমে গেছে। এই প্রান্তিকে কোম্পানিটি ১ হাজার ৪৭৮ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছিল। যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। আলোচিত প্রান্তিকে ২৪২ কোটি টাকার কম পণ্য বিক্রি হয়েছে।
এদিকে কোম্পানিটি এক বিজ্ঞপ্তিতে লোকসানের বেশ কিছু কারণ তুলে ধরেছে। প্রকাশিত তথ্য অনুসারে, আলোচিত প্রান্তিকে কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি ও ঋণ সংক্রান্ত ব্যয় কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। কোম্পানিটির পণ্য বিক্রি সংক্রান্ত ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ৮১ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল মাত্র ২ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে ঋণ সংক্রান্ত ব্যয় ১ দশমিক ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮ দশমিক ০২ শতাংশ হয়েছে।
কোম্পানির ভাষ্য অনুসারে, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটির ২৬২ কোটি ৪৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানির মোট আর্থিক ব্যয় হয়েছে ৩২২ কোটি ৪২ লাখ টাকা, যা আগের বছর একই সময়ে ছিলো মাত্র ৩৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
কোম্পানিটির দাবি, টাকার বিপরীতে ডলারের দাম অস্বাভাবিকভাবে না বাড়লে এবারও তাদের ভাল মুনাফা হতো। ডলারের দাম আগের বছরের সমান থাকলে প্রথম প্রান্তিকে ওয়ালটনের ইপিএস হতো কমপক্ষে ৭ টাকা ১৪ পয়সা। এ সময়ে লোকসানের পরিবর্তে কোম্পানিটির ২০০ কোটি টাকার বেশি নিট মুনাফা হতো।