যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে, এর মধ্যে ৯.৮ শতাংশ দখলে রেখেছে বাংলাদেশ। এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে বাইরে থেকে রপ্তানি হওয়া প্রতি দশটি পোশাকের একটি বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অফিস অভ টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেল (ওটেক্সা)-র সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি এর আগের বছরের তুলনায় ৩৬.৪ শতাংশ বেড়ে ৯.৭৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ওটেক্সার তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করে, এর মধ্যে ৯.৮ শতাংশ দখলে রেখেছে বাংলাদেশ। এর অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে বাইরে থেকে রপ্তানি হওয়া প্রতি দশটি পোশাকের একটি বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে।
বিশ্বের বৃহত্তম বাজার থেকে শুল্ক সুবিধা না পাওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শেয়ার ছিল যথাক্রমে ৮.২ ও ৮.৮ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক খাতে বাংলাদেশের এই শক্তিশালী পারফরম্যান্সের কারণ হিসেবে রপ্তানিকারকরা ভোক্তাদের চাহিদা ও ট্রেন্ডের সাথে বাংলাদেশের দ্রুত খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভালো মানের ফাস্ট-ফ্যাশন পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতার কারণে বাংলাদেশ ক্রমেই পরিচিত হয়ে উঠছে। ফলে আমেরিকান রিটেইলারদের কাছে বাংলাদেশ একটি নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তুলেছে।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের এই ঊর্ধ্বমুখী গতি প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভিয়েতনামের (যথাক্রমে ১০.৮% ও ২৭%) চেয়ে বেশি হলেও আর্থিক মূল্যের দিক থেকে তাদের রপ্তানির হার বাংলাদেশ থেকে অনেক বেশি।
বাংলাদেশের এখন উচিত পরিমাণের দিক থেকে প্রতিযোগিতায় নামার পাশাপাশি রপ্তানিকৃত পোশাকের গুণমানও বাড়ানো। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আকর্ষণীয় বাজারে বাংলাদেশ আরও বড় ভাগ দখল করতে পারবে।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. আনোয়ার শহীদ বলেন, "আমরা এই বৃদ্ধি আশা করছিলাম, কারণ আমরা মূলত বোনা কাপড় রপ্তানি করেছি, যেগুলোর কাঁচামাল আমদানিকৃত দামি বোনা কাপড়।"
"যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানি করা শার্ট আর ট্রাউজারের দাম তুলনামূলকভাবে অন্যান্যদের তুলনায় দামি," ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ডেনিম রপ্তানিকারক হিসেবে সবার ওপরে বাংলাদেশ ছিল বলে যোগ করে জানান তিনি।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অ্যাপারেল এজেন্ট শিমেক্স ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করা মো. আনোয়ার শহীদ জানান, "সারাবিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপীয় বাজারের তুলনায় কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর এ কারণেই এই বাজারে রপ্তানি বৃদ্ধি আমাদের জন্য ভালো।"
"মহামারীর সময় পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় সবগুলো রপ্তানিকারক দেশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। তবে মহামারীর সময়েও বাংলাদেশ তাদের গার্মেন্টস চালু রাখে, যেটি চীন বা ভিয়েতনাম করতে পারেনি। এ কারণে ক্রেতাদের কাছে আরও নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। ভূ-রাজনৈতিক কারণে অনেক ক্রেতাই আবার চীনকে সরিয়ে সে জায়গায় বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছে," বলে জানান তিনি।
ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এমএ রহিম জানান, গত ছয় মাসে তার গ্রুপ র্যালফ লরেনের মতো বিলাসী ব্র্যান্ডগুলোর জন্য দামী পোশাক তৈরি করা শুরু করেছেন, যেগুলো আগে চীন থেকে পোশাক আমদানি করতো। বর্তমানে কোম্পানিটি এমন কিছু পোশাক তৈরি করছে যেগুলোর রিটেইল দাম ২০০ থেকে ২৫০ ডলার।
বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) প্রেসিডেন্ট ফারক হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের এই বৃদ্ধি বেশ অনুপ্রেরণামূলক। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মহামারীর কারণে সাপ্লাই চেইন ব্যাহত হওয়ার মধ্যেই বাংলাদেশি সাপ্লাইয়াররা পণ্য সরবরাহ করে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের বিশ্বাস অর্জন করেছে।
তিনি আরও জানান, কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ায় তৈরি পোশাকের দামও বেড়ে গিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি থেকে আয়ও বেড়েছে। তাছাড়া ভ্যালু অ্যাডেড পণ্যও রপ্তানি করছে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা।
বিজিএমইএ প্রধান বলেন, "একটি শার্ট আগে রপ্তানি হতো ৮ থেকে ১০ ডলারে। এখন কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে সেটি ১২ থেকে ১৪ ডলারে রপ্তানি হচ্ছে। বাংলাদেশের বাজার দখলের আরেকটি কারণ এটি।" উন্নত প্রযুক্তি ও কর্মদক্ষতার কারণে স্থানীয় উদ্যোক্তারা আগের তুলনায় বেশি উঁচু-দামের পণ্যের অর্ডার পাচ্ছে বলেও জানান তিনি।