যুক্তরাষ্ট্রসহ মার্কিন মিত্র দেশগুলোকে একের পর এক হুমকি এবং দফায় দফায় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা, এটাই যেন আপাতত উত্তর কোরিয়ার প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে পাল্টা হুমকি দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রও। এতে করে পূর্ব এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে।
আর ক্রমবর্ধমান এই উত্তেজনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রকে আবারও কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটি বলছে, ওয়াশিংটন ও এর মিত্রগুলোকে ভয়ঙ্কর সামরিক জবাব দেওয়া হবে। বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোরীয় উপদ্বীপসহ এই অঞ্চলে নিরাপত্তা উপস্থিতি বাড়ানোর বিষয়ে মার্কিন প্রচেষ্টার ‘ভয়াবহ সামরিক প্রতিক্রিয়া’ সম্পর্কে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্র দেশগুলোকে সতর্ক করেছে উত্তর কোরিয়া। পিয়ংইয়ং হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছে, ওয়াশিংটন এমন একটি পদক্ষেপ নিচ্ছে যার কারণে দেশটিকে ‘অনুশোচনা করতে’ হবে।
এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জাপানের মধ্যে সাম্প্রতিক ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকের নিন্দা জানিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন হুই। সাম্প্রতিক ওই বৈঠকে তিন দেশের নেতারা পিয়ংইয়ংয়ের অস্ত্র পরীক্ষার সমালোচনা করার পাশাপাশি বৃহত্তর নিরাপত্তা সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
চলতি বছর উত্তর কোরিয়া রেকর্ড সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে। এর মধ্যে আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাও রয়েছে এবং ওই পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এছাড়া সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র যৌথ সামরিক মহড়া চালানোর সময় সমুদ্রে শত শত আর্টিলারি শেল নিক্ষেপ করে পিয়ংইয়ং। নিক্ষেপ করা এসব গোলাবারুদের কিছু জাপানের অংশেও পতিত হয়।
এদিকে বৃহস্পতিবার, দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলে আরেকটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের খবর দিয়েছে। অন্যদিকে সাম্প্রতিক ত্রিপক্ষীয় আলোচনায় পারমাণবিক অস্ত্রসহ ‘সম্পূর্ণ পরিসরের সক্ষমতার’ মাধ্যমে দুই এশীয় মিত্রকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এই পরিস্থিতিতে উত্তর কোরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী চো সন হুই বলেছেন, তিনটি দেশের সাম্প্রতিক ‘যুদ্ধ মহড়া’ উত্তর কোরিয়ার লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এতে করে ওই দেশ তিনটি বরং নিজেদের ওপর ‘আরও গুরুতর, বাস্তবসম্মত এবং অনিবার্য হুমকি’ ডেকে নিয়ে এসেছে।
উত্তর কোরিয়ার সরকারি সংবাদমাধ্যম দ্য কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি (কেসিএনএ) জানিয়েছে, এক বিবৃতিতে চো বলেছেন- ‘যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের রক্ষার জন্য পদক্ষেপ যত জোরদার করবে এবং তারা যত বেশি উস্কানিমূলক ও ব্লাফিং সামরিক তৎপরতা বাড়াবে... উত্তর কোরিয়ার সামরিক প্রতিক্রিয়া ও জবাব ততই ভয়াবহ হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বেশ ভালোভাবেই সচেতন হবে যে, এই ধরনের কর্মকাণ্ড আসলে জুয়া এবং এর জন্য ওয়াশিংটন অবশ্যই অনুশোচনা করবে।’
চলতি বছরের মে মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্র বলে আসছে, ২০১৭ সালের পর থেকে প্রথম বারের মতো পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া। কিন্তু পিয়ংইয়ং ঠিক কখন এই পদক্ষেপ নিবে বা পরীক্ষার প্রকৃত সময় এখনও অস্পষ্ট।
সাম্প্রতিক ত্রিদেশীয় শীর্ষ সম্মেলনের পরে দেওয়া এক যৌথ বিবৃতিতে ওয়াশিংটন, সিউল ও টোকিও জানায়, পিয়ংইয়ংয়ের সম্ভাব্য পারমাণবিক পরীক্ষার ‘শক্তিশালী এবং দৃঢ় প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হবে।
তবে চো সন হুই বলছেন, উত্তর কোরিয়ার সামরিক তৎপরতা মার্কিন নেতৃত্বাধীন মহড়ার ‘বৈধ এবং ন্যায্য প্রতিক্রিয়া’।