মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিকখাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে মুদ্রানীতি এবং রাজস্বনীতির মধ্যে সমন্বয় ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
শনিবার ঢাকায় সংস্থাটির নিজ কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২২-২৩: তৃতীয় অন্তবর্তীকালীন পর্যালোচনা’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ পরামর্শ তুলে ধরা হয়।
সিপিডির লিখিত পর্যালোচনা উপস্থাপন করেন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, আসন্ন বাজেটে সরকারের সামনে চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে-প্রথমত আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, বহিঃখাতের ভারসাম্য, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির চাপ সাধারণ মানুষকে ভোগাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ মূল্যস্ফীতির জন্য বৈশ্বিক পর্যায়ে পণ্য মূল্য বেড়ে যাওয়া যেমন দায়ী, পাশাপাশি আমাদের কিছু দূর্বল আর্থিক নীতি সেটাকে আরও উসকে দিয়েছে। তিনি মনে করেন রাজস্ব আহরণ কম থাকায় সরকার কেন্দ্রিয় ব্যাংক থেকে বিপুল অংকের টাকা ঋণ নিয়েছে, যা পরোক্ষভাবে পণ্যের মূল্য বাড়াচ্ছে। এছাড়া টাকা ও মার্কিন ডলারের বিনিময় হার পণ্যমূল্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে।
ফাহমিদা খাতুন মনে করেন মূল্যস্ফীতির মুল কারণ চিহ্নিত করার প্রয়োজন। সেই অনুযায়ী নীতি-পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য আর্থিক নীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে। একইসাথে নিজেদের জাতীয় স্বার্থে সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করাটা জরুরি। তিনি রাজস্ব আয় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নতুন উৎস খোঁজার তাগিদ দেন। এবারের বাজেটে ভর্তুকির যেন পুনবিণ্যাস করা হয়। ভর্তুকিটা যেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা,কৃষি ও সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিকে মূল অগ্রাধিকার দিয়ে বন্টন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলেনে সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রেমিটেন্স কেন কমে যাচ্ছে এর কারণ উদঘাটন করা জরুরি। জানুয়ারি ২০২১ থেকে এপ্রিল ২০২৩ এই সময়ে প্রায় ২১ লাখ শ্রমিক বিদেশে গেছে। এত মানুষ যাওয়ার পরও রেমিটেন্স কেন বাড়ছে না। তাঁরা কি হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছে? এসব কারণ খুঁজে বের করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার কারণে আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। তাই এই সময়ে বৈধ চ্যানেলে রেমিটেন্স আসা খুব জরুরি।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ব্যাংকের ঋণখেলাপীদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন প্রয়োগের পরামর্শ দেন। তিনি বলেন,অবৈধভাবে অর্জিত টাকা যারা বিদেশে পাচার করছেন,তাদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক আইন প্রয়োগের সুযোগ রয়েছে। সরকার সেই জায়গায় যেন শিথিলতা না দেখায়। আগামী অর্থবছরের বাজেটে আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া হবে সেগুলো যেন চলমান বাস্তবতার প্রেক্ষিতে নেয়া হয়, সেই সুপারিশ করেন তিনি।