ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিকল্পনামাফিক সহিংসতা হয় না বলে দাবি করলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। সোমবার পিটারসন ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক্সে ভারতীয় অর্থনীতির শক্তি ও বৃদ্ধি নিয়ে কথা বলছিলেন তিনি। সেখানেই নির্মলাকে প্রশ্ন করা হয়, মুসলিমদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে। এই প্রশ্নও আসে যে, এসব ঘটনার জন্যই কি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা পিছিয়ে যাচ্ছেন?
জবাবে দেশটির অর্থমন্ত্রী বলেন, বিশ্বে মুসলিম জনসংখ্যার নিরিখে ভারত হলো দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ভারতে মুসলিমদের সংখ্যা বাড়ছে। কিছু নিবন্ধে বলা হয়, ভারতে মুসলিমরা খুব খারাপ আছে, সেরকম হলে বাস্তবে তো তার একটা প্রভাব পড়তো। মুসলিমদের সংখ্যা বাড়তো না। কিন্তু ১৯৪৭-এর পর থেকে মুসলিম জনসংখ্যা তো বাড়ছে।
এরপরই নির্মলা সীতারামন পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। তিনি বলেন, পাকিস্তান বলেছিল, সংখ্যালঘুদের স্বার্থরক্ষা করবে, কিন্তু প্রতিদিন সেখানে সংখ্যালঘুদের সংখ্যা কমছে। তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার পথে। ছোটখাটো অভিযোগে তাদের জেলে ভরে দেয়া হচ্ছে। সেখানে ধর্মনিন্দার আইন ব্যক্তিগত শত্রুতার প্রতিশোধ নিতে ব্যবহার করা হয়। অর্থমন্ত্রীর দাবি, পাকিস্তানে সংখ্যালঘু তো বটেই, কিছু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের বিরুদ্ধেও সেখানে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
ভারতের অর্থমন্ত্রীর দাবি, ‘ভারতে থাকা মুসলিমরা পাকিস্তানের তুলনায় অনেক ভালো কাজ করছেন। পাকিস্তানে যারা মূলস্রোতের সঙ্গে নেই, তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা হচ্ছে। আর ভারতে সব মুসলিম সম্প্রদায় তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। তাদের বাচ্চারা শিক্ষিত হচ্ছে। সরকার তাদের বৃত্তি দিচ্ছে।’
ভারতে মুসলিমদের উপর অত্যাচার করা হয়- এই অভিয়োগ সীতারামন মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘ভারতে কোনো সহিংসতা হলে কি সেটা মুসলিমদের বিরুদ্ধে হয়? তাহলে মুসলিমদের জনসংখ্যা বাড়ছে কী করে? ২০১৪ ও আজকের দিনের মধ্যে কি তাদের সংখ্যা কমে গেছে? কোনো এক সম্প্রদায়ের মধ্য়ে কি মৃত্যুহার বেড়েছে?’
সীতারামনের চ্যালেঞ্জ, যারা এই ধরনের কথা বলছেন, ‘তারা ভারতে আসুন, পরিস্থিতি দেখুন, আমরা তাদের খরচ বহন করবো। তারা ভারতে দাঁড়িয়ে সব দেখে নিজেদের অভিযোগ প্রমাণ করুন। আমরা বিনিয়োগ চাই। যারা বিনিয়োগ করতে চান, তারাও দেখুন ভারতে কী হচ্ছে। অন্য মানুষের ধারণার কথা না শুনে তারা বাস্তব পরিস্থিতি দেখে যান।”
ভারতে এ নিয়ে আগে বিতর্ক হয়েছে। তথাকথিত ‘গোরক্ষকদের’ হাতে যখন বেশ কিছু মুসলিম প্রাণ হারান, তখন এই ধরনের অভিযোগ উঠেছিল। কিছু রজ্যে মুসলিম আন্দোলনকারীদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয়ার অভিয়োগ উঠেছে।
প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘যখন কোনো ঘটনা ঘটে, তখন সরকার বলে, এটা দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এসব নিয়ে যেন বিদেশিরা হস্তক্ষেপ না করে। এখন তারা অন্য যুক্তি দিচ্ছে। কিন্তু এখন এমন একটা সময়, কোনোকিছুই চেপে রাখা যায় না।’ সূত্র: ডিডাব্লিউ, এনআই, পিটিআই