দেশে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি বজায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতির চাপে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেক মানুষ। তাই আগের সঞ্চয় করা তহবিল ভেঙে হাতে নগদ টাকা রাখছেন অনেকে। এসব নগদ অর্থ দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাচ্ছেন তারা।
এদিকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কোনভাবেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। কারণ গত তিন মাস ধরেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ শতাংশের ওপরে রয়েছে। গত অক্টোবর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এছাড়া অক্টোবরে সার্বিক মূল্যস্ফীতিও কিছুটা বেড়ে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে।
মূল্যস্ফীতি হলো একধরনের করের মতো, যা ধনী-গরিব নির্বিশেষে সবার ওপর চাপ বাড়ায়। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশেষ করে গরিব ও মধ্যবিত্তের সংসার চালাতে ভোগান্তি বেড়েছে। এখন বাজারে সবধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশ চড়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ৬ হাজার ৭৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে আগের মূল ও মুনাফা পরিশোধ করা হয়েছে ৬ হাজার ৮৯৩ কোটি ৬৪ টাকা। এরপর পর সেপ্টেম্বর মাসে এ খাতে সরকারের নিট ঋণ (ঋণাত্মক) দাঁড়িয়েছে ১৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা অর্থের ওপর সরকার একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর সুদ দেয়। মেয়াদপূর্তির পরে বিনিয়োগকৃত অর্থও ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ এখন সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফলছেন। আর সুদের হার কমানো ও বিভিন্ন শর্তের কারণে মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র কেনার প্রবণতা কমেছে।
মানুষ প্রথমত টাকা জমা রাখেন ব্যাংকে। এরপর বেশি নিরাপত্তা ও অধিক মুনাফার আশায় অনেকে টাকা সঞ্চয়পত্রেও বিনিয়োগ করেন। আবার ডাক বিভাগের সঞ্চয় ব্যাংকেও অনেকে টাকা জমা রাখেন। প্রবাসীরা বিদেশ থেকেও তিন ধরনের বন্ডে বিনিয়োগ করে থাকেন। এসব বিনিয়োগে ব্যাংকের সঞ্চয় থেকে বেশি সুদ পাওয়া যায়। আবার রয়েছে কর ছাড়সহ নানা সুবিধাও। সুদ বেশি হলেও ব্যাংকের বাইরে সরকারি বিভিন্ন বিনিয়োগ পণ্য কেনা কমিয়ে দিয়েছে মানুষ। ফলে নতুন করে সঞ্চয়পত্র যে পরিমাণ কেনা হচ্ছে, নগদায়ন হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। এতে দিনে দিনে এসব বিনিয়োগ পণ্যে মানুষের জমানো টাকা কমে যাচ্ছে।
অধিক মুনাফার আশায় ব্যাংকে আমানতের চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে মানুষের একসময় আগ্রহ ছিলো। তবে ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে সকল ধরনের সঞ্চয়পত্রে সুদ হার কমানো হয়। এছাড়া আরও অনেক ধরনের কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এরপর থেকে ধারবাহিকভাবে কমতে থাকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ। সেপ্টেম্বর মাসেও সঞ্চয়পত্রে সরকারের নিট ঋণ ঋণাত্মক হয়েছে।
এদিকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ১৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার, যা ২০২২-২৩ অর্থবছরের চেয়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা বা ৪৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ কম। সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিলো ৩৫ হাজার কোটি টাকা।