ভোমরা স্থল বন্দরের “ডিজিটালাইজেশন অফ বর্ডার প্রসিডিউরস” শীর্ষক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান রাজধানীর হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের বলরুমে সোমবার (২৯ মে) আয়োজন করা হয়। এসময় ভোমরা স্থলবন্দরের ডিজিটালাইজেশনের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল। গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের (জিএটিএফ) পরিচালক ফিলিপ আইসলারসহ সংশ্লিষ্ট আরো অনেকে। অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষের (বিএলপিএ) চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর।
সুইসকন্ট্যাক্ট বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর মুজিবুল হাসান এবং সুইসকন্ট্যাক্ট গ্লোবালের পার্টনারস অ্যান্ড ক্লায়েন্ট বিভাগের পরিচালক স্টেফানি ড্রেইফুস উদ্বোধনী বক্তব্য প্রদান করেন।
সুইসকন্ট্যাক্টের টেকনিক্যাল এডভাইজার ইশরাত ফাতেমা প্রকল্পের উপর একটি উপস্থাপনা প্রদান করেন। বিএলপিএর পরিচালক (প্রশাসন) এবং এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ডি এম আতিকুর রহমান সমাপনী বক্তব্য প্রকাশ করেন। এসময় সুইসকন্ট্যাক্টের কর্মকর্তারা প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে এই প্রকল্পের গুরুত্বের উপরে জোর দেন।
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (GATF) উন্নয়নশীল এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে বাণিজ্য সহজীকরণ প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করে। এটি একটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ যা ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অফ কমার্স (ICC), সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজ এবং GIZ এর সমন্বয়ে গঠিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মানি, ডেনমার্ক, যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকার এই আলায়েন্সকে প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থায়ন করে থাকে। সুইসকন্ট্যাক্ট GATF প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এলায়েন্স কর্তৃক অনুমদিত সংস্থা। সুইসকন্ট্যাক্ট ভোমরা স্থলবন্দর ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পের বাস্তবায়নে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা করছে।
প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সাতক্ষীরা জেলার (দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলাদেশ) ভোমরা স্থলবন্দরে সম্পাদিত হবে, যেটিকে ২০০২ সালে একটি স্থলবন্দর হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল কিন্তু তা ২০১৩ সালে চালু হয়। পুরো বন্দরটি বর্তমানে ম্যানুয়াল সিস্টেমে পরিচালিত হচ্ছে এর ফলে পণ্যবাহী ট্রাকগুলির প্রবেশ এবং প্রস্থানে বিলম্বের পাশাপাশি বন্দর ইয়ার্ডে উল্লেখযোগ্য যানজটের কারণও।
ভোমরা স্থলবন্দরে রপ্তানি-আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য একটি ই-পোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডিজাইন ও বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্য। উক্ত প্রকল্পের উল্লেখযোগ্য কার্যাবলির মধ্যে রয়েছে-
-ওয়েব-ভিত্তিক সারভেইলেন্স সিস্টেম এবং ওয়্যারলেস সিসিটিভি সরঞ্জাম ইন্সটল করা।
-ই-পেমেন্টের মাধ্যমে বন্দরের ফি পরিশোধ করা।
-ই-পোর্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সুরক্ষার জন্য উপযুক্ত এন্টিভাইরাস নির্বাচন এবং প্রয়োগ করা।
– সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য বন্দর সম্পর্কিত সকল স্টেকহোলডার দের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সক্ষমতা বৃদ্ধি করা।
গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন (GATF) এর পরিচালক ফিলিপ আইসলার মনে করেন যে, উক্ত প্রকল্পটির মাধ্যমে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সিএনএফ এজেন্ট এবং ব্যবসায়িক শ্রেণীর কার্যক্রমকে আরও তরান্বিত করবে। ২০০২ সালে GATF এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে, পরবর্তীতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে TAPP স্বাক্ষরের মাধ্যমে এর বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয়।
বাংলাদেশে স্থলবন্দরের ডিজিটালাইজেশনের ব্যপারে শুরু থেকেই ততপর বাংলাদেশ সরকারের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী , এমপি। তিনি বলেন,“প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, যা উভয় দেশের জন্য ভোমরা স্থলবন্দরের অবস্থানকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলেছে। পদ্মা সেতু বাংলাদেশের ১টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প, যা ভোমরা স্থলবন্দর থেকে ২২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। সেতুটি ভোমরা স্থলবন্দর সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে সরাসরি প্রবেশাধিকার প্রদান করে। এর পাশাপাশি মংলা স্থলবন্দর ভোমরা স্থলবন্দরের কাছাকাছি হওয়ায় এই বন্দর এর গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কেননা নেপাল এবং ভুটানের মতো স্থলবেষ্টিত দেশগুলি মংলা সমুদ্র বন্দর ইতিমধ্যে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।”
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ মোস্তফা কামাল তার বক্তব্যে এই উদ্যোগের সম্ভাবনা এবং আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদানের ওপর জোর দেন। তিনি বন্দর কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ, সচেতনতাবৃদ্ধি এবং প্রকল্পের টেকসই রক্ষণাবেক্ষণের উপর জোর দেন।
বিএলপি’র চেয়ারম্যান মোঃ আলমগীর ভোমরা স্থলবন্দরের ভৌগোলিক অবস্থানের তাৎপর্য এবং বন্দরের রাজস্ব বৃদ্ধিতে ডিজিটালাইজেশনের ইতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, বর্তমানে একটি পণ্যবাহী ট্রাকের বন্দর সংশ্লিষ্ট সমস্ত সীমান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় পাঁচ ঘন্টা সময় লাগে, যা আমদানিকারকদের (বেশিরভাগই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা) জন্য ব্যয় এবং সময় সাপেক্ষ। উক্ত বন্দরটি ডিজিটালাইজেশন এর ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য বন্দর সংশ্লিষ্ট খরচ এবং সময়সীমা কমাতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।