যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরুর খবরে কিছুটা উদ্বেগ এবং দুশ্চিন্তা তৈরি হয়েছে ব্যবসায়ী-উদ্যোক্তাদের মধ্যে। দেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ও রপ্তানিকারকরা। তাদের ধারণা, এর প্রভাব হিসেবে বিভিন্ন ধরনের অশুল্ক বাধার শঙ্কা রয়েছে। মার্কিন বিনিয়োগও সংকুচিত হতে পারে। সে দেশ থেকে আসা প্রবাসী আয়ও কমে যেতে পারে।
গবেষণা সংস্থা সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান মনে করেন, ভিসা নিষেধাজ্ঞা দু’দেশের সম্পর্কের তিক্ততা প্রমাণ করে। তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্সের ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়। একই সুরে কথা বলছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এই দুই সুর মিলে রপ্তানি, বিনিয়োগ ও রেমিট্যান্সে দুশ্চিন্তার জায়গা তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয় নতুন আর কী পদক্ষেপ নেয় যুক্তরাষ্ট্র।
ড. সেলিম রায়হান আরও বলেন, গত এক দশকের বেশি সময় ধরে সারাবিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্কের ভিত্তিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে অনেক উন্নয়ন পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতার কথা জানা যায়। এর মধ্যে তিক্ততার সম্পর্কোন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। এ তিক্ততার অবসান হওয়া উচিত।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার ভিসা নীতির প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় সরকারপন্থি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা পড়বেন বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়।
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। গেল ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশটিতে মোট ৯৭০ কোটি ডলার মূল্যের বিভিন্ন ধরনের পণ্য রপ্তানি হয়; যা দেশের মোট রপ্তানি আয়ের ১৭ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকেই এসেছে ৮৫২ কোটি ডলার। বাকি সব পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ১২৮ কোটি ডলার। অন্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে হোমটেক্সটাইল, ওষুধ, পাদুকা, ফার্নিচার, খেলনা ইত্যাদ। রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিকমানের কর্মপরিবেশ না থাকার অভিযোগে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা বা জিএসপি স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। গত এক দশকেও সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়নি। দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি সুবিধার আওতায় ছিল না।
একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রের। ২০২২ সাল শেষে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ স্থিতি ৪১০ কোটি ডলার। অন্যদিকে উল্লেখযোগ্য অঙ্কের রেমিট্যান্স আসে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে।