এপ্রিল ১৯, ২০২৪

প্রতিটি স্পিনিং মিলের ক্ষেত্রে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার ৩০ মিলিয়ন থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থের অভাবে মিলগুলো উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। এর ফলে ব্যাপক লোকসানে পড়তে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে। তাই এসব মিলের ব্যাংক ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় চেয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন।

মঙ্গলবার (৩০ মে) বিটিএমএ আয়োজিত টেক্সটাইল খাতের বিরাজমান সমস্যা ও উত্তরণ সংশ্লিষ্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট বলেন, রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) অনিয়মিত বরাদ্দ ও ঋণের পরিমাণ কমেছে। প্রয়োজনীয় ডলারের অভাবে তুলা আমদানির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংক এলসি খুলতে পারছে না। রপ্তানিমূখী টেক্সটাইল স্পিনিং মিলগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ইডিএফ ফান্ড। আমাদের টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাণিজ্যে এই ফান্ডের ইতিবাচক প্রভাব দশ্যমান। তবে গত এক বছরে এ তহবিলটির আকার প্রতিটি স্পিনিং মিলের ক্ষেত্রে ৩০ মিলিয়ন ডলার থেকে ২০ মিলিয়ন ডলারে নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে ঋণের পরিমাণ কমেছে। অর্থের অভাবে মিলগুলো উৎপাদনের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ কাঁচামাল আমদানি করতে পারছে না। এর ফলে ব্যাপক লোকসানে পড়তে হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

তিনি বলেন, মিলের ব্যাংক ঋণের কিস্তি ও সুদ পরিশোধে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত সময় চেয়ে ঋণের অর্থ ব্লক একাউন্টে রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়া পরবর্তী সময়ে সহজ শর্তে ঋণের কিস্তি পরিশোধের সুবিধাও চেয়েছেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, জামানত প্রদানের কারণে স্পিনিং মিলগুলোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ গত ১৫ মাসে (জানুয়ারি ২০২২ – মার্চ ২০২৩) প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি গভীর চক্রান্তের সম্মুখীন হয়েছে। বর্তমানে ঘরে ঘরে পাকিস্তানি কাপড়ে ভরে গেছে। সরকার ২০৩০ সালে টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে খাতাটির এই নাজুক অবস্থা দীর্ঘদিন থাকলে সরকারের এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে না।

এছাড়াও তিনি বলেন, স্পিনিং মিলগুলো তাদের উৎপাদন অব্যাহত রেখেছে, শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি পরিশোধসহ ইউটিলিটি বিল নিয়মিত প্রদানের জন্য লোকসানে পণ্য বিক্রি করতে হচ্ছে। উৎপাদন খরচ অপেক্ষা ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কম মূল্যে সুতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে মিলগুলো। এতে গড়ে একটি মিলকে গ্যাস ব্যবহার না করেও বছরে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা অতিরিক্ত গ্যাস বিল প্রদান করতে হবে।

বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট বলেন, আশা করেছিলাম করোনা পরবর্তী সময়ের পর থেকে আমাদের মিলগুলো ঈদুল ফিতরের বাজারটি পাবে। তবে তীব্র ডলার সংকটের পরেও ঈদুল ফিতরসহ সকল সময়ে বন্ডেড ওয়্যার হাউসের মাধ্যমে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের আমদানি করা বিদেশি সুতা শহরের বড় শপিং মলগুলোতে অবাধে বিক্রয় করা হয়। এতে স্থানীয় মিলগুলোর অবস্থা সংকটের মধ্যে পড়েছে ।

তিনি বলেন, পাকিস্তান ছাড়াও প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন থেকে আসা সুতা-কাপড়সহ বিভিন্ন ড্রেস-ম্যাটেরিয়েল বিভিন্ন নগরীতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকার ইসলামপুরের বিক্রমপুর প্লাজাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এগুলো ব্যাপকভাবে বিক্রয় হচ্ছে। আমরা জানিনা সরকার এর মাধ্যমে কি পরিমাণ রাজস্ব পেয়েছে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায় এর ফলে দীর্ঘ দিনে গড়ে ওঠা প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতে বিদ্যমান ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রি আজ অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে।

এসময় খোরশেদ আলম নামে এক উদ্যোক্তা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে। আমার ৩৭ বছরের শিল্প জীবনে এমন গ্যাসের সংকট দেখা যায়নি। গ্যাসে ৮ থেকে ১০ ঘন্টা থাকে না এ কারনে আমার একটা ইউনিট বন্ধ, অন্য ইউনিটের ৩৫ শতাংশ কাজ চলছে। বিদ্যুতের সমস্যাও ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *