রাশিয়ার হামলার মোকাবিলা করতে শুরু থেকেই ইউক্রেনকে সামরিক সাহায্য করে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব৷ শীর্ষ নেতারা বার বার সেই সহায়তার অঙ্গীকার করে বলছেন, যতদিন প্রয়োজন তাঁরা ইউক্রেনের পাশেই থাকবেন৷ অথচ ইউক্রেনের অস্ত্র, গোলাবারুদ ও সামরিক সরঞ্জামের চাহিদা মেটাতে শুরু থেকেই দ্বিধা ও দ্বন্দ্ব কাজ করছে৷
রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাতের ‘লাল রেখা’ অতিক্রম করার ঝুঁকি, ভয়, পরিণাম বিবেচনা করে অনেক দেশই প্রথম পদক্ষেপ নিতে ভয় পেয়েছে৷ তবে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, ব্যাটেল ট্যাংক সরবরাহ নিয়ে সেই দ্বিধা শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে দেরিতে হলেও ইউক্রেনকে সেগুলি সরবরাহ করেছে ইউরোপ ও অ্যামেরিকা৷ বর্তমানে বোমারু বিমান সরবরাহের প্রশ্নে তেমন মনোভাব দেখা যাচ্ছে৷
‘সাহসি’ পদক্ষেপের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছে ব্রিটেন৷ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদোমির জেলেনস্কি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করে বোমারু বিমানের জন্য অনুরোধ করলেও কোনো নেতা ইতিবাচক সাড়া দেন নি৷ কিন্তু শেষ গন্তব্য লন্ডনে তিনি কিছুটা আশার আলো পেয়েছেন৷ ফ্রান্সের পর ব্রিটেনও ইউক্রেনের পাইলটদের উন্নত বোমারু বিমান চালানোর প্রশিক্ষণের আশ্বাস দিয়েছে৷ সেই লক্ষ্যে নতুন স্কুল খোলার ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷ এবার সরাসরি এমন বিমান সরবরাহের উদ্যোগও শুরু করছে তাঁর সরকার৷ এর আগে প্রথম দেশ হিসেবে ইউক্রেনকে দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দেবার ঘোষণা করেছে সে দেশ৷
ব্রিটেনর প্রধানমন্ত্রী সুনাক এবং নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে মঙ্গলবার ইউক্রেনকে বোমারু বিমান সরবরাহ করতে এক আন্তর্জাতিক জোট গড়ার অঙ্গীকার করেছেন৷ সেই জোটের ছত্রছায়ায় পারস্পরিক সমন্বয়ের মাধ্যমে পাইলট প্রশিক্ষণ থেকে শুরু করে এফ-১৬ বোমারু বিমান জোগাড় করার মতো পদক্ষেপের প্রস্তাব দিয়েছেন তাঁরা৷ উল্লেখ্য, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিও এমন স্পর্শকাতর অনুরোধের ক্ষেত্রে কোনো একটি দেশের উপর চাপ সৃষ্টি না করে ‘ফাইটার জেট কোয়ালিশন’ গড়ার ডাক দিয়ে আসছেন৷
বলা বাহুল্য, ব্রিটেন ও নেদারল্যান্ডস সেই ডাকে সাড়া দেওয়ায় জেলেনস্কি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন৷ দৈনিক ভিডিও বার্তায় তিনি প্রথমে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, তারপর নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রীর অঙ্গীকারের উল্লেখ করে ‘জোট গড়ার শুভ সূচনা’-র জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান৷ এতকাল অ্যামেরিকাসহ সব পশ্চিমা দেশ এফ-১৬ বোমারু বিমান সরবরাহের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করার পর ইউক্রেনের প্রশাসন অবশেষে আশার আলো দেখছে৷
জার্মানি এখনো ইউক্রেনের ডাকে সাড়া দেয় নি৷ জেলেনস্কির সাম্প্রতিক বার্লিন সফরের আগে ইউক্রেনের জন্য বিশাল সামরিক প্যাকেজ ঘোষণা করে ওলাফ শলৎসের সরকার প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তার ক্ষেত্রে অ্যামেরিকার পরেই জার্মানি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে৷ জার্মানিকে ‘প্রকৃত বন্ধু’ হিসেবে উল্লেখ করে শলৎসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন জেলেনস্কি৷ সূত্র: ডিডাব্লিউ, এএফপি, ডিপিএ