পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ এবং তার স্ত্রী ও দুই কন্যার বিরুদ্ধে মামলা করার পথে হাঁটছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে যেসব তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতেই মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে সংস্থাটি।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদকের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বেনজীরকে তলব করেছে দুদক। তার স্ত্রী জিশান মির্জা, বড় মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর এবং ছোট মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরকে তলব করা হয়েছে আগামী ৯ জুন। কিন্তু অবৈধ সম্পদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন না বেনজীর ও তার পরিবার। ধারণা করা হচ্ছে, স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন সাবেক আইজিপি। এ অবস্থায় দুটি মামলা করবে দুদক।
সূত্র বলছে, বেনজীর ও তার পরিবারের নামে একটি মামলা করা হবে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে। এ ছাড়া আরেকটি ‘নন-সাবমিশন’ মামলাও করবে দুদক। এর মধ্যে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এ ছাড়া নন-সাবমিশন মামলায় আরও তিন বছরের কারাদণ্ড হতে পারে বেনজীর ও তার স্ত্রী-কন্যাদের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের একজন কর্মকর্তা জানান, বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের হিসাব চেয়ে শিগগিরই তাদের ঠিকানায় নোটিশ পাঠানো হবে। নোটিশ গ্রহণ করার মতো কাউকে পাওয়া না গেলে তা বাসার দেয়ালে টানিয়ে দেওয়া হবে। তবে খবর অনুযায়ী বেনজীর আহমেদ সপরিবারে দেশত্যাগ করায় নোটিশ গ্রহণ করতে পারবেন না বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ‘নন-সাবমিশন’ মামলা হবে।
প্রসঙ্গত, সাবেক আইজিপি ও র্যাবপ্রধান বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয় গত মার্চে। পরে সেই সংবাদ আমলে নিয়ে দুদককে অনুসন্ধান করতে সংস্থাটির চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন।
এরপরই বেনজীর আহমেদ, তার স্ত্রী জিশান মির্জা, মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের খোঁজে গত ২২ এপ্রিল অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৩ ও ২৬ মে বেনজীর, তার স্ত্রী ও দুই কন্যার নামে থাকা অবৈধ বিশাল সম্পদ জব্দের আদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধ করারও আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া তাদের নামে থাকা ৬২৭ বিঘা জমি ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দ এবং ৩৮টি ব্যাংক হিসাব ও বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, শুধু দেশের ভেতরেই নয়, বাইরেও অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বেনজীর আহমেদ। অবসরে যাওয়ার পর তিনি তুরস্কে নাগরিকত্ব নিয়েছেন কয়েক কোটি টাকায়। মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম প্রকল্পের আওতায়ও করেছেন বিনিয়োগ। স্ত্রী জিশান মির্জার নামে সেকেন্ড হোম করেছেন স্পেনে। এছাড়া দুবাইয়ের পাম জুমেরা ও মেরিনা এলাকায় নামে-বেনামে বেনজীরের বেশ কয়েকটি অ্যাপার্টমেন্টের খোঁজ পেয়েছে দুদক। দুবাইয়ের মস্কো নামের একটি হোটেলে তিনি বিনিয়োগ করেছেন বলেও তথ্য আছে সংস্থাটির কাছে।
এদিকে বেনজীরের অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তা, ভূমি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদসহ অন্যদেরও তালিকা করছে দুদক। তালিকা তৈরির পর তাদের বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান শুরু করবে সংস্থাটি। তাদেরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে বলে জানিয়েছে সূত্র। ঢাকা, গাজীপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় অবৈধ সম্পদের বিশাল সাম্রাজ্য গড়েছেন বেনজীর আহমেদ। এসব এলাকার ভূমি অফিসের সাব-রেজিস্ট্রারদের নাম তালিকায় থাকতে পারে বলে ধারণা করছে দুদক। সূত্র আরটিভি।