জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগর দিয়ে শস্য রপ্তানিতে ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার যে চুক্তি হয়েছিল, রাশিয়া সেই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ফলে বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। একইসঙ্গে এর ফলে খাদ্যপণ্যের দাম আবার বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার কথা কয়েক হাজার টন গম শেষ পর্যন্ত সেখানে পৌঁছাতে পারবে কি না তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এছাড়া ইউরোপে ইউক্রেনীয় ভুট্টা রপ্তানিও শঙ্কার মধ্যে পড়েছে।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় কৃষ্ণসাগরে যে চুক্তি হয়েছিল শনিবার থেকে তা অনির্দিষ্টকালের স্থগিত করে রাশিয়া। এই চুক্তিতে কৃষ্ণসাগরের বন্দর ব্যবহার করে ইউক্রেনকে শস্য রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। রাশিয়ার অভিযোগ যখন ক্রিমিয়ায় তার কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার একটি নৌবহরে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালিয়েছে।
এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে গম সরবরাহ করা সিঙ্গাপুরভিত্তিক একজন শস্য ব্যবসায়ী বলেন, ইউক্রেন থেকে আসার কথা ছিল, এমন জাহাজ যদি আমাকে পরিবর্তন করতে হয় তাহলে আমার হাতে বিকল্প কী থাকে? খুব বেশি কিছু থাকে না।
করোনা মহামারি, প্রতিকূল আবহাওয়ার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বছরের শুরুতে গমের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চে উঠেছিল এবং ভুট্টার দাম ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়।
এখন রাশিয়া এই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোর ফলে গম সরবরাহে যে ঘাটতি তৈরি হবে এশিয়ার অন্যতম প্রধান গম সরবরাহকারী দেশ অস্ট্রেলিয়া তা পূরণ করতে পারবে না, কারণ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সমস্ত শিপিং স্লট নির্ধারিত হয়ে আছে।
রোববার সামুদ্রিক মানবিক করিডোর দিয়ে কোনো জাহাজ চলাচল করেনি। আর রাশিয়া না থাকলেও জাতিসংঘ, তুরস্ক এবং ইউক্রেন ১৬টি জাহাজ এগিয়ে নেওয়ার জন্য একটি ট্রানজিট পরিকল্পনায় সম্মত হয়েছে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক শস্য ব্যবসায়ী বলছেন, আমাদের দেখতে হবে পরিস্থিতি কোন দিকে যায়। ইউক্রেন শস্য পাঠানো অব্যাহত রাখবে কি না এবং রুশ রপ্তানির কী অবস্থা হয়, তাও স্পষ্ট নয়।
সোমবার শিকাগোতে আগের চেয়ে ৫ শতাংশ বেশি দামে গম ও ২ শতাংশ বেশি দামে ভুট্টার ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি হয়েছে।
গমের জন্য এশিয়া সাধারণত অস্ট্রেলিয়া এবং উত্তর আমেরিকার ওপর নির্ভরশীল হলেও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শস্য আমদানিকারক দেশ ইন্দোনেশিয়া ও কিছু এশীয় দেশ সম্প্রতি ইউক্রেনীয় গমের কার্গো বুকিং করেছে।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ইন্দোনেশিয়ান মিলাররা গত কয়েক সপ্তাহে স্বাক্ষরিত চুক্তিতে নভেম্বরের চালানের জন্য চারটি কার্গো বা প্রায় ২ লাখ টন ইউক্রেনীয় গম কিনেছে।
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের একটি সরকারি সংস্থা রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে টেন্ডারে প্রায় ৩ লাখ ৮৫ হাজার টন গম কিনতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একজন ব্যবসায়ী বলছেন, আমরা নিশ্চিত নই যে রাশিয়া গম রপ্তানি অব্যাহত রাখবে কি না বা ইউক্রেনীয় রপ্তানি বন্ধ থাকলে রুশ গম বহনকারী জাহাজের জন্য এ পথ নিরাপদ হবে কি না।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় শস্যচুক্তির অধীনে জাতিসংঘ, তুরস্ক, রাশিয়া এবং ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি জয়েন্ট কোঅর্ডিনেশন সেন্টার (জেসিসি) জাহাজ চলাচল এবং সেগুলো পরিদর্শনের বিষয় সম্মত হয়েছিল। জুলাইয়ের পর কৃষ্ণ সাগর দিয়ে সাড়ে ৯ টনের বেশি বেশি ভুট্টা, গম, সূর্যমুখী পণ্য, বার্লি, রেপসিড এবং সয়া রপ্তানি করা হয়েছে।
বিশ্বে যত গম উৎপন্ন হয় তার ত্রিশ ভাগ উৎপাদন করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। যুদ্ধের আগে ইউক্রেন ৪৫ মিলিয়ন টন খাদ্য শস্য প্রতি মাসে রপ্তানি করতো।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য সংকট তৈরি হয়। ছয় মাস পর চুক্তির ফলে ইউক্রেন আবার খাদ্যশস্য রফতানি শুরু করে। এর ফলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। এখন রাশিয়া চুক্তি থেকে সরে দাঁড়ানোয় ফের উদ্বেগ তৈরি হলো।
সূত্র : রয়টার্স ও বিবিসি।