প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটকে অভিনন্দন জানিয়ে ৭টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করার জন্য দাবি জানিয়েছেন দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক ক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু। ইতোমধ্যে ওই প্রস্তাবগুলো পুনর্বিবেচনা করার জন্য অর্থমন্ত্রী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), পরিকল্পনামন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (৬ জুন) রাজধানীর একটি হোটেলে ডিএসইর বাজেট পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, রুবাবা দৌলাসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, সরকার হয়তো এবার আমাদের পুঁজিবাজারে করারোপ করেননি। তবে অমাদের কিছু চাহিদা ছিল, সেটার বিষয়ে দৃষ্টি দেননি। এ বিষয়েও পরিকল্পনামন্ত্রী গত রোববার তার বক্তব্যে বলেছেন। আমাদের পুঁজিবাজার অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল উপকরণ। তাই আমাদের ৭টি প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করার জন্য দাবি জানাচ্ছি।
অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, একটি কার্যকরী বন্ড বাজার অর্থনীতিকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করতে পারে। যদি সব ধরনের বন্ডের সুদ অব্যাহতির আওতায় আনা যায় তখন একটি শক্তিশালী বন্ড বাজার সৃষ্টিতে উৎসাহিত করবে। কোম্পানিগুলো কর-পরবর্তী মুনাফা থেকে লভ্যাংশ দিচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে লভ্যাংশের ওপর কর এক ধরনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের করারোপণ। লভ্যাংশের ওপর উৎসকর চূড়ান্ত কর হিসেবে বিবেচিত হলে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে৷ ডিএসইর ট্রেকহোল্ডার কোম্পানির প্রধান আয় (টার্নওভার) হচ্ছে কমিশন। যদি বেশি হারে কর নেওয়া হয় তবে ট্রেকহোল্ডারদের পক্ষে টিকে থাকা এবং পুঁজিবাজারে অবদান রাখা কঠিন হবে। তাই ট্রেকহোল্ডারদের লেনদেনের উপর উৎসে কর ০.০৫ থেকে কমিয়ে ০.০১৫ শতাংশ করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হারের পার্থক্য ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। এছাড়া এসএমই বোর্ডের অধীনে তালিকাভুক্ত এসএমই কোম্পানির করপোরেট কর হার ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হারের পার্থক্য নূন্যতম ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। এতে অ-তালিকাভুক্ত কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জের এসএমই প্ল্যাটফর্মে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হবে। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার হ্রাস করতে হবে। বর্তমানে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও অ-তালিকাভুক্ত উভয় কোম্পানির ভ্যাট হার ১৫ শতাংশ। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ভ্যাট হার হ্রাস করে ১০ শতাংশ করার সুপারিশ করছি।
ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতসহ অন্যান্য উন্নত দেশের পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানিকে তাদের মোট শেয়ারের নূন্যতম ১০ শতাংশ তালিকাভুক্ত করা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় সেই সকল কোম্পানি সেই দেশে ব্যবসা করার অনুমতি পায় না। তাই আমাদের দেশেও পুঁজিবাজারের উন্নয়নকল্পে এইরূপ আইন প্রণয়ন করা এবং তার প্রয়োগ জরুরি।
পুঁজিবাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিএসই হবে অত্যন্ত টেকনোলজি নির্ভর। ডিএসই হওয়া দরকার সম্পূর্ণ পেপার লেস। আমি অল্প কিছুদিন হলো দায়িত্ব পেয়েছি তাই সব কাজ শুরু করতে পারিনি। তবে খুব শিগগিরই আমরা কাজ শুরু করবো। ডিএসইকে আমরা আইটি খাতে সমৃদ্ধ করবো। এটাকে আমরা অনেক বেশি গুরুত্ব দিব। পুঁজিবাজার সাধারণ মানুষের বাজার। এটা গণ মানুষের বাজার। যেখানে তাদের রুজির জায়গা। এই বাজারে সরকারের সুদৃষ্টি অত্যান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছি। এর মাধ্যমে এই বাজেট জনগণের বাজেট হয়ে উঠবে। বর্তমানে মানুষ পুঁজিবাজার বিমুখ হয়ে যাচ্ছে। তবে অনেকে পরিবেশের অপেক্ষায় আছে আবার এই বাজারে ফিরে আসতে। বিশ্বে পুঁজিবাজারকে অর্থনীতির গতি বাড়ানোর উপর কাজে লাগাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের শেয়ারবাজার ব্যাংক নির্ভরতায় পড়ে আছে।
তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমানের যে অবস্থা সেটা বেশি দিন থাকবে না। এই সমস্যা পার হয়ে যাবে। এই পুঁজিবাজার হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের অন্যতম মাধ্যম। তাই আমাদের সবাইকে এক হয় কাজ করতে হবে। তবেই এই বাজারের সফলতা সম্ভব। আমাদের অনেকগুলো পরিকল্পনা আছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম হলো আমরা জাপানি বিনিয়োগ আনতে কাজ করছি। আপনারা আশাহত হবেন না। কাজগুলো অগ্রগতিতে দেরি হচ্ছে তবে অপেক্ষা করলে আমরা ভালো কিছু পেতে যাচ্ছি। সবার সহযোগিতা পেলে আমরা সুন্দর একটা পুঁজিবাজার পাবো। এছাড়াও এই বাজারের উন্নয়নে সরকারের ভূমিকা অনেক। যা পেতে সাধারণ মানুষ মুখিয়ে আছে। ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজারের বর্তমানের যে অবস্থা সেটা বেশি দিন থাকবে না। এই সমস্যা পার হয়ে যাবে। এই পুঁজিবাজার হবে সরকারের অর্থ সংগ্রহের অন্যতম মাধ্যম। তাই আমাদের সবাইকে এক হয় কাজ করতে হবে। তবেই এই বাজারের সফলতা সম্ভব।