রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, রাশিয়ার পরীক্ষিত বন্ধু বাংলাদেশ। সমতা ও সম্মান এই বন্ধুত্বের ভিত্তি। রাশিয়া শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে না, প্রকল্পের পুরো সময়কাল সব ধরনের কারিগরি সহযোগিতাও করে যাবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের ইউরেনিয়াম হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার বিকেলে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি আরও যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসি।
রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, ২০২৪ সালের প্ল্যান্টটির প্রথম ইউনিট এবং ২০২৬ সালে উৎপাদনে আসবে দ্বিতীয় ইউনিট। শিডিউল অনুযায়ী শেষ হবে এর নির্মাণকাজ। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের বর্ধনশীল অর্থনীতির চাহিদা মেটাতে ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্পে সরাসরি ২০ হাজার বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য অনেক কোম্পানি এই প্রকল্পে কাজ করছে। সেটাও কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে। ভারতও এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সহোযোগিতা করেছে।
ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর যে কয়েকটি দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল তারমধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম। গতবছর বঙ্গবন্ধুর মস্কো সফরের সুবর্ণজয়ন্তি পালিত হয়েছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ করবে। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাবে। ফলে দেশের পরিবেশ সুরক্ষিত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কোনও কার্বন নিঃসরণ করবে না। যা পরিবেশের জন্য খুব ভালো হবে। মানুষের স্বাস্থ্যের ভালো হবে, জনগণের ভালো হবে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থার নিয়ম ও সুপারিশ মেনে করা হচ্ছে। রূপপুরে নিরাপত্তা নির্ভরযোগ্য ও অত্যাধুনিক। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য বাংলাদেশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সরবরাহের সনদ প্রদান দেওয়া হলো। এর মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মার্যাদা পাবে বাংলাদেশের প্রথম এই পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র৷
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, শান্তিপূর্ণ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা গভীর। অনেক ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরমাণুযুগে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৩তম পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারকারী দেশে পরিণত হলো। গত ২৮ সেপ্টেম্বর একটি বিশেষ ফ্লাইটে রাশিয়া থেকে ইউরেনিয়ামের প্রথম চালানটি বাংলাদেশে পৌঁছে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাশিয়া সফরের সময় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য একটি ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। রাশিয়ার ঠিকাদার হিসেবে রোসাটম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে।
এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুটি ইউনিট রয়েছে। রূপপুর পরমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে এবং দ্বিতীয় ইউনিট ২০২৫ সালের মাঝামাঝিতে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটিতে ৩০ হাজার মানুষ কাজ করছেন। প্রকল্পটি ৬০ থেকে ৮০ বছর ধরে চালু থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রকল্পের লে-আউটে বলা হয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতিদিন দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। একইসঙ্গে এটি কার্বন নিঃসরণ কমানোর বৈশ্বিক উদ্যোগ সমর্থন করবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরমাণু শক্তি কমিশন এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। রাশিয়ান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি অ্যাটমস্টো এক্সপোর্ট প্রকল্পের অধীনে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট নির্মাণ করছে। পারমাণবিক জ্বালানি রোসাটমের সহযোগী কোম্পানি টিভিইএল ফুয়েল তৈরি করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের কাছ থেকে পারমাণবিক জ্বালানি ক্রয় করে।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিতে একবার পারমাণবিক জ্বালানি সরবরাহ করা হলে এক বছরের জন্য বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেতে পারে। এরপর চুল্লিতে পুনরায় জ্বালানি সরবরাহ করতে হবে।