একক বাজার হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি চলতি বছরের প্রথম দুই মাস জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে ১১৮ কোটি ৬২ লাখ ডলারেরও বেশি পোশাক আমদানি করেছে, যা ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসের তুলনায় ১৯ দশমিক ২৪ শতাংশ কম।
গত ৪ এপ্রিল প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীন অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) পরিসংখ্যানে এ তথ্য উঠে এসেছে।
ওটিইএক্সএর দেশভিত্তিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আলোচ্য দুই মাসে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ পিছিয়েছে। পোশাক রফতানিকারকরা বলছেন, ব্যবসার খরচ বেড়ে যাওয়া, পোশাকের বৈচিত্র্যহীনতাসহ একাধিক অভ্যন্তরীণ কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ কমছে। উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা বলছেন, যদিও যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের চাহিদা বেড়েছে, কিন্তু চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে তুলনামূলক পিছিয়েছে বাংলাদেশ।
ওটিইএক্সএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির অর্থমূল্যে বেড়েছে দশমিক ৪৮ শতাংশ আর পরিমাণে বেড়েছে ১৪ দশমিক ৯৪ শতাংশ। একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির অর্থমূল্যে বেড়েছে দশমিক ১৪ শতাংশ আর পরিমাণে বেড়েছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির অর্থমূল্য ছিল ১৪৭ কোটি ডলার। ২০২৪ সালের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে আমদানি হয়েছে ১১৮ কোটি ৬২ লাখ ডলারের কিছু বেশি।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির পরিমাণ ছিল ৩৯ কোটি ৫৬ লাখ ৯০ হাজার বর্গমিটার। ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল ৪৫ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার।
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির অর্থমূল্য ছিল ২৫৪ কোটি ডলার। ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্র আমদানি করে ২৫৩ কোটি ডলারের পোশাক। ২০২৪ সালের একই সময়ে ভিয়েতনাম থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা পোশাকের অর্থমূল্য ছিল ২৩৬ কোটি ডলার। দেশটি থেকে ২০২৩ সালেও প্রায় একই অর্থমূল্যের পোশাক আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। গোটা বিশ্ব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি ২০২৩ সালের প্রথম দুই মাসের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রথম দুই মাসে কমেছে ৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ।
ওটিইএক্সএর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির তৃতীয় সর্বোচ্চ উৎস ছিল বাংলাদেশ। মোট আমদানিতে বাংলাদেশের হিস্যা দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১২ শতাংশ। চীন ও ভিয়েননামের অবদান ছিল যথাক্রমে ২১ দশমিক ২৬ ও ১৮ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বাংলাদেশের নিট পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসার খরচ ক্রমেই বাড়ছে। অন্যদিকে চীন ও ভিয়েতনাম বিশ্ববাজারে নিজেদের অংশীদারত্ব বাড়াতে পোশোকের কম দাম প্রস্তাব করছে। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের চাহিদা বৃদ্ধির সুবিধা নিতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হচ্ছে। এ বিষয়টিকে নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় নেয়া উচিত। কারণ বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অংশীদারত্ব বাড়াতে ব্যর্থ হয়, তা আবার পুনরুদ্ধার করা কঠিন হবে।’
চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে কম্বোডিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির অর্থমূল্য ছিল ৫৪ কোটি ৫২ লাখ ডলার, ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায় যা ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি। এছাড়া ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ১৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমেছে ১৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।