বাংলাদেশের আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ দেখতে চেয়ে বিভিন্ন ধরনের চাপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এই চাপে সৃষ্ট পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে চীন। এর ফলে উদ্বেগ বেড়েছে ভারতের। আজ মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের চাপ ‘চরমপন্থি শক্তির’ হাতকে শক্তিশালী করতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাকে বিনষ্ট করতে পারে বলে ভারত ‘যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে’। বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন কয়েকজন ব্যক্তি এই তথ্য হিন্দুস্তান টাইমসকে জানিয়েছেন।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, নাম প্রকাশ না-করার শর্তে ওই ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি আলাপ-আলোচনা চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রকে এই বিষয়ে ভারতীয় পক্ষ তার উদ্বেগ জানিয়েছে। নয়াদিল্লির বিশ্বাস, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে চাপ দিচ্ছে তা বাংলাদেশকে ‘চীনের আরও কাছে ঠেলে দিতে পারে’। আর তেমনটি হলে তা এই অঞ্চলের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা দাবি করেছে।
‘ভারতও বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। কিন্তু এ বিষয়ে খুব বেশি চাপ দেওয়া হলে তা শুধুমাত্র শেখ হাসিনা সরকারের বিরোধী চরমপন্থি ও মৌলবাদী শক্তিকে উৎসাহিত করবে বলে তারা মার্কিন নেতৃত্বকে জানিয়েছে,’ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারীদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞারও হুমকি দিয়েছে তারা।
ভারতের আশঙ্কা, যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান চাপে সৃষ্ট এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতে পারে চীন। গত ২৩ আগস্ট জোহানেসবার্গে ব্রিকস সম্মেলন চলাকালে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্টের মন্তব্য ভারতকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলেছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, শি জিনপিং বলেছেন, বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানকে সমর্থন করে চীন এবং পারস্পরিক স্বার্থরক্ষায় ঢাকার সঙ্গে কাজ করবে বেইজিং।
এ ছাড়া বিবৃতিতে শেখ হাসিনার উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলা হয়, পারস্পরিক সম্মান এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) শেখ হাসিনার সরকারের ওপর যে চাপ দিচ্ছে, তা বিরোধী দল বিএনপিকে উৎসাহিত ও সংগঠিত করছে। এ ছাড়া বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র জামায়াতে ইসলামীর পুনরুজ্জীবন পাওয়ার বিষয়টিও উদ্বেগের সঙ্গে দেখছে নয়াদিল্লি। খবর হিন্দুস্তান টাইমস
গত ১০ জুন ঢাকায় ১০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বিশাল সমাবেশ করে জামায়াত। এই দলটি সর্বদা ‘ভারত বিরোধী এবং পাকিস্তানের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। ভারত বিশ্বাস করে জামায়াতের শক্তিশালী হয়ে ওঠা ‘চরমপন্থি শক্তিকে উৎসাহিত করতে পারে’ বলেও হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।