ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হওয়ার পর, ধর্মব্যবসা প্রতিরোধ করে নিপীড়িত বাঙালি জাতির ন্যায্য অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন প্রতিষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগ। এরপর খুব দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের প্রতিটি প্রান্তে ঘুরে ঘুরে এই দলকে গণমানুষের দলে পরিণত করেন তেজস্বী আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। যার ফলশ্রুতিতে বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশকে একই স্পন্দনে অনুভব করতে শুরু করে বাংলার মানুষ। ফলে বাঙালির জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের দীর্ঘ পথযাত্রার প্রতিটি আন্দোলন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে সমর্থ হয় এই দল। যার পরিণতি আসে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার হাত ধরে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য ধাপে ধাপে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালে উগ্রবাদীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর, সদ্য স্বাধীন দেশের অগ্রযাত্রা থমকে যায়। কিন্তু মুক্তিসংগ্রাম ও স্বাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনাকারী এই দলটি আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে, কারাবন্দি করার পর হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর সহচর চার জাতীয় নেতাকে। দেশজুড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হত্যাযজ্ঞ এবং নির্যাতন শুরু করে স্বৈরাচার ও উগ্রবাদীরা। কিন্তু আওয়ামী লীগকে দমিয়ে রাখা সম্ভব হয়নি।
জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলকে আবারো সংগঠিত করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে পতন ঘটান স্বৈরাচারের। উগ্রবাদীদের ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে বাংলার মানুষের ঘরে ঘরে স্বাধীনতার সুফল পৌঁছে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হন তিনি। ফলে বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও শোষণ থেকে মানুষকে থেকে মুক্ত করে, বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাশীল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ।
মহান স্বাধীনতা অর্জন এবং মর্যাদাবান রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা:
একটি জাতির বহু ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-শ্রেণিপেশার মানুষকে একতাবদ্ধ করে দীর্ঘ দুই যুগ ধরে মুক্তিসংগ্রাম পরিচালনা করা এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা- দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন। এমনকি স্বাধীনতা অর্জনের পর মাত্র তিন মাসের মধ্যে মিত্রবাহিনীকে ফেরত পাঠিয়ে নিজস্ব জনবল দিয়ে দেশ পুনর্গঠন এবং বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রের স্বীকৃতি নিয়ে আসা আওয়ামী লীগের আরো একটি বড় অর্জন। আওয়ামী লীগ প্রধান ও বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আন্তর্জাতিক ইমেজ এবং দূরদর্শিতার কারণেই সদ্য-স্বাধীন এই দেশটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এবং গ্রহণযোগ্যতা পায়।
কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নেতাদের হত্যার ঘটনায় থমকে যায় সবকিছু। উগ্রবাদী ও স্বৈরাচারদের অপশাসনের কারণে দুর্ভোগের শিকার হয় মানুষ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইতিবাচক ইমেজ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির পুনর্গঠন চলাকালেই আবারো অন্ধকারাচ্ছতায় ডুবে যায় জাতি।
কিন্তু রাজপথে দীর্ঘ সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ আবারো সরকার গঠন করে থমকে থাকা দেশপুনর্গঠনের কাজ নতুন করে শুরু করে। ১৯৯৮ সালের বন্যায় দেশের ৭০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হওয়ার পরেও, আওয়ামী লীগ সরকারের ত্রাণ কার্যক্রম এবং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছাশ্রমের কারণে কোনো জনবল ক্ষয় ছাড়াই এই দুর্যোগ মোকাবিলা করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় বাংলাদেশ।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর, জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদের কড়াল গ্রাস থেকে বাঙালি জাতিকে মুক্তিদান এবং বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরামর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে, মাত্র এক যুগের মধ্য দেশকে ডিজিটাইজড করে বিস্ময় সৃষ্টি করে আওয়ামী লীগ সরকার। ক্ষুধা-দারিদ্র্য এবং উগ্রবাদের গ্রাসে নিমজ্জিত বাংলাদেশের এই উত্থানের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করছে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’
২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন দায়িত্ব নেন, তখনও দেশের মাত্র ৪৭ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পেত। নিয়মিত লোডশেডিংয়ে তখন জনজীবন বির্যস্ত ছিল। বিদ্যুৎ খাতের এই করুণ অবস্থার কারণে বৃহৎ শিল্পগুলো যেমন একদিকে ধুঁকছিল, তেমনিভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পর্যায়েও কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু মাত্র এক যুগের মধ্যে দেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন নিশ্চিত করতে সমর্থ হয় আওয়ামী লীগ সরকার। একইসঙ্গে দেশকে ডিজিটাইজড করার উদ্যোগ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে শতভাগ বিদ্যুতায়নের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এবং ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সুবিধা। যার কারণে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান।
বিএনপি-জামায়াত সরকার মোবাইল ফোন ব্যবসায় মনোপলি সৃষ্টি করে জনগণের নাগালের বাইরে রেখেছিল, কিন্তু আওয়ামী সরকার সেই প্রতিবন্ধকতা দূর করে সবার জন্য বাজার উন্মুক্ত করে দেয়। ফলে সবার হাতে হাতে পৌঁছে যায় মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সরকার ডিজিটাল ব্যাংকিং চালু করে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশে। ফলে এখন দেশের ৮ কোটিরও বেশি মানুষ মোবাইলের মাধ্যমেই অর্থ লেনদেন ও ব্যবসাবাণিজ্য করতে পারছে। ডিজিটাল ডিভাইসকে অর্থনৈতিক কর্শকাণ্ডের সঙ্গে সংযুক্ত করায় গণমানুষের অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা বহুগুণ বেড়েছে।
এমনকি, ডিজিটাল সুবিধাকে ব্যবহার করে ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার এবং অন্যান্য ডিজিটাল সেবা রফতানি করছে বাংলাদেশ। এছাড়াও প্রায় ৬ লাখ ৫০ হাজার ফ্রিল্যান্সার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে বছরে ৫০০ মিলিয়নের বেশি ডলার রেমিট্যান্স অর্জন করছে। এই খাত থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকার কমপক্ষে ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করছে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে মুগ্ধ হয়ে, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে- ২০৩০ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৪তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। এই লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্মার্ট বাংলাদেশ স্লোগানে দেশের মানুষের শতভাগ ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্য অর্জনে কাজ করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বিস্ময়কর অগ্রযাত্রা পর্যালোচনা করে এজন্যই জাতিসংঘের রেজ্যুলেশনে বলা হয়েছে- বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে সক্ষমতা অর্জন করেছে। উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই উন্নত দেশের তালিকায় যুক্ত হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। মাত্র এক যুগের মধ্যে এই বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় উত্তরণ কোনো অলৌকিক কিছু নয়। বরং আওয়ামী সরকারের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা এবং গণমানুষের জন্য গৃহীত সুপরিকল্পিত উদ্যোগ বাস্তবায়নের কারণে আজ স্মার্ট জাতি হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমীহ আদায় করতে সমর্থ হয়েছি আমরা।
নারীমুক্তির মাধ্যমে রুচিশীল নতুনপ্রজন্ম গঠন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি:
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নারীদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা ও সরকারি কর্মক্ষেত্রে ১০ শতাংশ কোটা চালু করেন, সেই পথ ধরেই আজ প্রাইমারি শিক্ষকতায় ৬০ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষণ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। ফলে নিজ অঞ্চলে বাস করেই প্রাইমারি স্কুলগুলোতে চাকরি করতে পারেন নারীরা, বিশেষায়িত কোনো দক্ষতাও প্রয়োজন হয় না- নারীদের জন্য এটি সুবিধাজনক ও সহজ। ফলে নারী শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারী শিক্ষার্থীর হারও বাড়ছে। পরবর্তীতে যারা উচ্চশিক্ষা নিয়ে পুরুষদের মতোই সবরকমের কর্মে যোগদান করতে সমর্থ হচ্ছেন।
দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাই আর্থিক ও সামাজিকভাবে তাদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে ভবিষ্যৎপ্রজন্মকে শিক্ষিত ও মানবিক প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নারী উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। বিনামূল্য প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা এবং উপবৃত্তির মাধ্যমে নারীদের এগিয়ে নেওয়ার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রায় সাত কোটি নারীকে উগ্রবাদের কবল ও সামাজিক দাসত্ব মুক্ত করে আত্মসন্মানবোধ সম্পন্ন জীবন দিতে এবং তাদের কর্মের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার নীতিমালা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।
দুর্যোগ মোকাবিলা এবং মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গণমানুষের পাশে থাকা:
২০২০ সালে করোনাভাইরাসের কারণে পুরো বিশ্ব যখন থমকে যায়, তখনও নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জনগণের পাশে থাকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। ভাইরাসের মৃত্যুভয়ে যখন সব রাজনৈতিক দল নিরাপদ দূরত্বে সরে যায়, তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারকে সহযোগিতা করতে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ এবং দলটির অঙ্গসংগঠনগুলো। করোনাআক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সহায়তা এবং মৃতের দাফন-কাফন সম্পন্ন করার মতো মানবিক কর্মে যুক্ত হয়ে ভাইরাসে প্রাণ হারায় প্রায় অর্ধশত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী। এরপরেও নিম্ন আয়ের এক কোটি অসহায় মানুষের ঘরে স্যানিটাইজার, মাস্ক, সাবান, ঔষধ, প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য এবং নগদ অর্থ পৌঁছে দেয় আওয়ামী লীগ।
করোনার ভয়াল গ্রাস চলাকালে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে হানা দেয় একাধিক ঘূর্ণিঝড়। ফলে নষ্ট হয়ে যায় অনেক কৃষকের ফসল ও মৎস্য চাষ প্রকল্প। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে থাকতে, ডিজিটাল সুবিধা ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে নগদ অর্থ প্রদান করা হয় প্রায় ৫০ লাখ কৃষক-শ্রমিক-মজুরকে। এমনকি করোনাকালে সারা দেশের মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা ও এতিমখানার উন্নয়ন এবং এসবের সঙ্গে যুক্ত প্রায় অর্ধকোটি মানুষের জন্য আড়াইশ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়াও- উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষকে ঘূর্ণিঝড়, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস ও যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষার জন্য টেকসই বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়। সমুদ্রের লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ থেকে উপকূলের মানুষের ক্ষেত-খামার রক্ষার জন্য উপকূলজুড়ে নির্মাণ করা হয়েছে বেড়িবাঁধ। দেশের টেকসই অর্থনীতি ও বিকাশমান প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জলবায়ু রক্ষার জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
করোনা পরবর্তী পৃথিবীতে বাংলাদেশের মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে আরো সক্ষম করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০২১-২০২৫ মেয়াদি অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। যা বাস্তবায়নে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা। এই মেয়াদে ১ কোটি ১৬ লাখ ৭০ হাজার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শেষে দারিদ্র্যের হার ১৫.৬ শতাংশে এবং চরম দারিদ্র্যের হার ৭.৪ শতাংশে নেমে আসবে। সামাজিক বৈষম্য ব্যাপকহারে হ্রাস করে দেশবাসীকে একটি মানবিক সমাজ উপহার দেওয়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।
স্বল্প আয়ের মানুষদের আর্থনৈতিক মুক্তির জন্য সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গ্রামের কৃষক, শ্রমিক, বেকার যুবক, দরিদ্র, অসহায় ও স্বল্প পূঁজির মানুষদের সহায়তার জন্য প্রতিটি উপজেলায় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক। পশু-পাখি পালন, সবজি চাষ বা কৃষিকাজের জন্য জামানত ছাড়াই এখন ঋণ পাচ্ছে মানুষ।
গৃহহীন মানুষদের মাথাগোঁজার জায়গা করে দিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের জন্য জমিসহ বাড়ি নির্মাণের করে দেওয়ার কাজ চলমান রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। নিয়মিত বিরতিতে সেগুলো হস্তান্তর করা হচ্ছে অসহায় মানুষদের হাতে। মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দল এরকম উদ্যোগ নেয়নি।
ক্রীড়া-সংস্কৃতির বিকাশ এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ’বাংলাদেশ’ ব্রান্ড
স্বাধীনতার পরপরই দেশের তরুণপ্রজন্মের বিকশিত ভবিষ্যতের জন্য খেলাধুলা প্রসারে উদ্যোগ নেয় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের অংশ হিসেবেই, ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের তারকা ফুটবলারদের নিয়ে প্রথম খেলার আয়োজন করেন বঙ্গবন্ধু। মে মাসে ভারতের অন্যতম সেরা দল মোহনবাগানকে নিয়ে আসা হয় মোহামেডানের বিরুদ্ধে খেলার জন্য। দেশের ফুটবলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিত করাতে, ১৯৭৩ সালে রাশিয়ার মিন্স্ক ডায়নামো ক্লাবকে ঢাকায় নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু। এমনকি বঙ্গবন্ধুর উৎসাহ ও আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগের কারণেই ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ার মারদেকা ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলার ব্যবস্থা হয় বাংলাদেশ ফুটবল দলের।
সেই ধারাবাহিকতাতেই, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পরপরই আবারো দেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতির বিকাশে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ ফুটবল দল দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়। এমনকি ক্রিকেটের উন্নতির জন্য ঢেলে সাজানো হয় ক্রিকেট বোর্ড এবং ভালো কোচ এনে উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় খেলোয়ারদের। ফলে ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জিতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, লাভ করে ওডিআই স্ট্যাটাস। এরপরেই ১৯৯৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজে প্রথম জয় এবং ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তান ও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় ক্রিকেট দল।
এছাড়াও ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের টেবিল ডিপলোম্যাসির কারণে টেস্ট স্ট্যাটাস লাভ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, ফলে আইসিসির সব সুযোগসুবিধা যোগ্য দাবিদার হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। মূলত এই স্টাটাস অর্জনের কারণেই পরবর্তীতে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এতো উন্নতি সম্ভব হয়েছে। টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্তির মাধ্যমে ক্রিকেটের উন্নতির সুদূর প্রসারী লক্ষ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগের আশ্রয় নেয় আওয়ামী সরকার। ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ২৫ বছর উদযাপন উপলক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে ইন্ডিপেন্ডেন্ট কাপ, আইসিসি নকআউট চ্যাম্পিয়নশিপ এবং ত্রিদেশি সিরিজ, ১৯৯৯ সালে মেরিল কাপ আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দলগুলোকে বাংলাদেশে নিয়ে এসে খেলানোর কৌশল নেওয়া হয়।
এরপর টেস্টখেলুড়ে দেশগুলো সফর করে তাদের বোর্ডের কাছে বাংলাদেশে ক্রিকেটের সম্ভাবনা এবং বাজার সম্পর্কে ইতিবাচক তথ্য তুলে ধরা হয়। এমনকি ক্রিকেটের বুনিয়াদ গঠনের জন্য ১৯৯৯-২০০০ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় ক্রিকেট লীগের মাধ্যমে চারদিনের ম্যাচ চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার। বহুমুখী প্রচেষ্টার ফলে অবশেষে ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। যার ফলে আজ বিশ্বব্যাপী একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে টিম টাইগার।
পরবর্তীতে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর নারীদের খেলাধুলার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব ও পৃষ্ঠপোষকতা শুরু করে। ফলে ২০১১ সালে ওডিআই স্ট্যাটাস পায় নারী ক্রিকেট দল। নিয়মিত পরিচর্যার কারণে ২০১৮ সালে এশিয়া কাপ জয় এবং ২০২১ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে নারী ক্রিকেটাররা। দেশজুড়ে জেলাভিত্তিক খেলাধুলায় সরকারের বিশেষ পৃষ্ঠপোষতার কারণে নারীদের ফুটবল দলেও সাফল্য আসে। ২০২১ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শেষ্ঠত্ব অর্জন করে অনুর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল দল। ২০২২ সালেই প্রথমবারের মতো সাফ চ্যাম্পিয়ন হয় জাতীয় নারী ফুটবল দল।
অবকাঠামো উন্নয়ন করে গণমানুষের সার্বিক অগ্রগতির পটভূমি তৈরি:
স্বাধীনতার পর জাতির পিতাকে হত্যা করে দেশের মানুষের ওপর জুলুম চালাতে থাকে স্বৈরাচার এবং উগ্রবাদী বিএনপি-জামায়াত জোট। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর রাজধানীর সাথে পুরো দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্তরণ ঘটায়। সারাদেশের সব মহাসড়ককে চার ও ছয় লেনে উন্নীত করা হয়। ফলে দেশের এক প্রত্যন্ত থেকে অন্য প্রান্তের যোগাযোগ ব্যবস্তা এখন সহজ হয়ে গেছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাজধানীর সাথে সংযুক্ত হতে পারছেন প্রান্তিক চাষি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।
এছাড়াও ২০০৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৪৫১ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ এবং ১ হাজার ১৮১ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হয়েছে। ৪২৮টি নতুন রেলসেতু নির্মাণ করা হয়েছে। যমুনা নদীর উপর ৪.৮ কিলোমটির দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে।
উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার অংশে মেট্রোরেল ও চট্টগ্রামে কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে দেশের প্রথম টানেল চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছে। খরস্রোতা পদ্মা নদীর ওপর বহুমুখী দ্বিতল সেতু নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। পাবনার রূপপুরে ১২শ’ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনও শুরু হবে শিগগিরই। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে ছিটমহল বিনিময়, স্থলসীমানা নির্ধারণ, দেশের প্রায় সম আয়তন নতুন জলসীমা জয়- এসব কোনো কিছুই করার চেষ্টা করেনি স্বৈরাচার ও বিএনপি-জামায়াত জোট। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার কারণেই এসব অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশ। এমনকি আওয়ামী লীগ সরকারের কারণেই, প্রথমবারের মতো মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়ে বিশ্বকে নিজেদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য সম্পর্কেও নতুন বার্তা দিতে সক্ষম হয়েছে বাঙালি জাতি।