আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংকের ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক করেছেন এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ প্রতিষ্ঠার শতবছর পার হয়ে গেছে। এই শতবছরে তারা সারা পৃথিবীর বহু দেশকে ঋণ দিয়ে ডুবিয়ে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে ক্যাব আয়োজিত ‘অসাধু বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবসা সুরক্ষায় মূল্যবৃদ্ধি নয়, জ্বালানি সুবিচার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন শামসুল হুদা।
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, ‘পৃথিবীর কোনো দেশ বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের শর্ত মেনে ঋণ নিয়ে স্বনির্ভর হয়েছে, সংকট থেকে পরিত্রাণ পেয়েছে, নিষ্কৃতি পেয়েছে- এমন কোনো উদাহরণ এক শতাব্দীতেও পাওয়া যায়নি। এই কথাটি আমাদের সবার মনে রাখা দরকার। বিশেষ করে নাগরিক, নাগরিক সমাজ, জনপ্রতিনিধি ও সরকারকে মনে রাখা দরকার। অতএব তাদের শর্ত পূরণ করার জন্য জনগণের ঘাড়ের ওপরে বোঝার পর বোঝা চাপাবেন, এটা অনেক করেছেন, অনেক অন্যায় করছেন, এই অন্যায় আর বাড়াবেন না।’
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমরা ঋণ নিয়েছি কেন? আমাদের অর্থনীতি প্রায় খালির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। সেই হিসাবে আইএমএফ আমাদের ঋণ সহায়তা দিয়েছে। এখন আইএমএফের কাছে আমাদের দাবি, আপনারা ন্যায়সঙ্গত পরামর্শ দেবেন। আপনারা পরামর্শ দিয়েছেন, ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুৎ, গ্যাসের, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করে ভর্তুকি হ্রাস করার। কিন্তু আপনারা বলছেন না এটির কোনো বিকল্প আছে। আপনারা দেখছেন না, পরীক্ষা করছেন না- এটির কোনো বিকল্প আছে কিনা। আমাদের ধারণা, অস্বচ্ছতা, অপচয়, অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থাপনা রোধ করে যদি স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, তাহলে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি না করে ভর্তুকি প্রত্যাহার করা সম্ভব।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এমএম আকাশ বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড ব্যাংক এবং আইএমএফ উভয়ের প্রস্তাব অনুযায়ী একসময় একটি কমিটি গঠিত হয়েছিল। যার নাম ছিল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিটি (বার্ক)। সেই কমিটির একটি প্রিন্সিপাল ছিল, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির যেকোনো মূল্যবৃদ্ধির আগে একটি গণশুনানি হবে এবং সেই গণশুনানিতে তিনজন স্টেকহোল্ডার উপস্থিত থাকবে। প্রাইভেট সেক্টর প্রতিনিধি, সরকারের প্রতিনিধি এবং কনজ্যুমার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবে। সেখানে প্রত্যেকে প্রত্যেকের যুক্তি উপস্থাপন করবে কেন দাম বাড়ানো হবে কেন দাম কমানো হবে। তারপর কমিশন স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রশ্ন হলো- কেন এটাকে বিলুপ্ত করা হলো? ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বা আইএমএফ কেন তখন শর্ত দিল না যে এটা নিষ্ক্রিয় করলে আমি আর ঋণ দেব না।’