বর্ষাকাল কেবল একটি ঋতু নয়, বরং তার চেয়েও বেশি কিছু। আমাদের দেশের মানুষ ও পরিবেশের ওপর এই ঋতুর গুরুত্ব অপরিসীম – এটি আমাদের সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থানেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বৃষ্টিতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে জানালার পাশে বসে বৃষ্টি দেখা অনেকের কাছে আনন্দদায়ক মনে হতে পারে। তবে, এই ভরা বর্ষায় বিশেষ করে ঢাকায় প্রতিদিন যাদের বাসার বাইরে যেতে হয়, তাদের জন্য বিষয়টি মোটেই সুখকর নয়। কাদা আর স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে চলাফেরা করতে হয় তাদের। ভারী বর্ষণে একদম কাকভেজা হয়ে যাওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়, তবে এ সময় সবচেয়ে বেশি মুশকিলে পড়তে হয় ভিজে যাওয়া জামাকাপড় নিয়ে। বর্ষার সময়ে কাপড়ে কাদা, নোংরা আর জীবাণুর পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলে, জামাকাপড় ঠিক মতো না ধোয়া হলে, এই কাদা-নোংরার কণা দীর্ঘসময় সেখানে রয়ে যেতে পারে।
বর্ষায় কীভাবে কাপড়চোপড় পরিচ্ছন্ন রাখবো, চলুন তাহলে আজ তা জেনে নিই!
দ্রুত কাপড় ভিজিয়ে ধুয়ে ফেলুন
বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়ার পর বাসায় আসার সাথে সাথেই যথাশীঘ্রই সম্ভব জামাকাপড় ধুয়ে ফেলতে হবে। এতে করে পোশাকে থাকা নোংরা ধুলিকণা বা দুর্গন্ধ ছাড়াও সকল কাদা-জীবাণু এক নিমিষেই পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তবে, কার্যকরী উপায়ে কাপড় ধুতে হলে ময়লা জামা অন্তত ৩০ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখা উচিত। এতে করে কাপড়ের সাথে থাকা যেকোনো দাগ-নোংরা খুব সহজেই উঠে যায়, একদম গভীর থেকে পরিচ্ছন্ন হয় পোশাক। আধুনিক কিছু ওয়াশিং মেশিনে বাবল সোক নামের এক ধরণের ফিচার পাওয়া যায় ,যা কাপড় গুলোকে সাবানের বাবলে ভিজিয়ে নেয় ,তাই ময়লা আর দাগ ভালোভাবে পরিষ্কার হয়। বর্ষায় অনেক বেশি কাপড়চোপড় ধোয়া লাগে; সেক্ষেত্রে পরামর্শ দেয়া হয়, ভালো কোনো ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করলে জামাকাপড় পরিচ্ছন্নতার এই কাজটি অনেক সহজ হয়ে যায়।
সঠিক পরিমাণে ডিটারজেন্ট ব্যবহার
জামাকাপড় পরিচ্ছন্ন রাখার ক্ষেত্রে খুব সাধারণ একটি টোটকা হচ্ছে- সঠিক পরিমাণে ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা। এটি এমন একটি প্রয়োজনীয় গৃহস্থালি সামগ্রী যা পরিমাণের চেয়ে বেশি ব্যবহার করলে জামাকাপড় আঠালো ও আর্দ্র হয়ে যেতে পারে, আবার কম ব্যবহার করলে কাপড় ঠিকভাবে পরিষ্কার হবে না। প্রতিবার কাপড় ধোয়ার সময় পরিমাণমতো ডিটারজেন্ট ব্যবহার করা অনেকের কাছেই কঠিন মনে হতে পারে। আর এই বিষয়টিকে সহজ করে তুলতে স্যামসাংয়ের মতো অনেক কনজ্যুমার ইলেকট্রনিকস ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠান বাজারে অটোমেটিক ডিসপেন্সার ফিচারসহ ওয়াশিং মেশিন নিয়ে এসেছে। যেখানে কিছুদিন পরপর অটো ডিসপেন্সার ভরে দেয়া ছাড়া আর তেমন কোনো কাজ থাকে না। এই ওয়াশিং মেশিন প্রতিবার ধোয়ার সময় কাপড়ের পরিমাণ অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে ডিটারজেন্ট ও ফ্যাব্রিক সফটনার নিয়ে নিবে। বর্ষাকালে অল্প পরিমাণ পানি ব্যবহার করেই ওয়াশিং মেশিনে ধোয়া যাবে, যেন কাপড় দ্রুত শুকিয়ে যায়।
কাপড় ভালোভাবে শুকিয়ে নিন
বর্ষা মানেই যেন আর্দ্রতা। যখন বাতাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি আর্দ্রতা থাকে তখন জামাকাপড় পুরোপুরি শুকিয়ে নেয়াটা খুব জরুরি। আর তাই এ সময়ে এরকম ওয়াশিং মেশিন ব্যবহার করা প্রয়োজন যেখানে ওয়াশার-ড্রায়ার কম্বিনেশন ফিচার রয়েছে। এ ধরণের ফিচারে উষ্ণ বাতাস ব্যবহারের মাধ্যমে পোশাক দুর্গন্ধমুক্ত ও জীবাণুমুক্ত করা হয়। কাপড় ধোয়া আর শুকানো এখন এক অ্যাপ্লায়েন্সেই সম্ভব; এমনকি প্রযুক্তির মাধ্যমে কাপড়ের স্যাঁতস্যাঁতে ভাব দূর করা বা সারাদিন শুকনো ও পরিচ্ছন্ন জামা ব্যবহার করা সম্ভব।
কুইক ওয়াশ ও আয়রন
বাজারের কিছু সর্বাধুনিক ওয়াশিং মেশিনে এমন সব ফিচার পাওয়া গেছে যা এই বর্ষা মৌসুমে কাপড় ধোয়াকে আরো সহজ করে দিবে। যেমন ১৫ মিনিট কুইক ওয়াশ যা পুরো ওয়াশিং সাইকেল ১৫ মিনিটে নিয়ে আসে।
অনেক সময় কাপড় শুকাতে দিলে দুমড়ে মুচড়ে যায়। ইজি আয়রন ফাংশন থাকলে স্পিন ড্রাই এর সময় এবং স্পীড কমিয়ে আনা যায় ।এরপর সহজেই বাসায় কাপড় আয়রন করা যায়।
কাপড় ধোয়া হলে সাথে সাথে বের করে ফেলুন
কাপড় ধোয়ার ক্ষেত্রে খুব জরুরি একটি বিষয় আমাদের মনে রাখতে হবে। আর তা হচ্ছে কাপড় ধোয়া মাত্র তা যতদ্রুত সম্ভব ওয়াশিং মেশিন থেকে বের করে ফেলতে হবে। আপনার ওয়াশিং মেশিন যত ভালোই হোক না কেন বা কাপড় যত ভালোভাবেই ধোয়া হোক না কেন, ধোয়া শেষ হয়ে গেলে তা কোনোভাবেই ওয়াশিং মেশিনের ভেতর ফেলে রাখা যাবে না।
বাংলাদেশের বর্ষাকাল মানেই যেন বৃষ্টিভেজা পরিবেশের সাথে নিত্যনতুন উপায়ে মানিয়ে নেয়া। বিশেষ করে বর্ষার এই সময়ে শুকনো ও পরিচ্ছন্ন পোশাক ব্যবহার করে আরামের খোঁজ করা যেন আরও বেড়ে যায় আমাদের। যাই হোক, এই বর্ষায় নিরবচ্ছিন্নভাবে কাপড় ধুতে হলে আধুনিক প্রযুক্তি-সম্পন্ন কোনো ওয়াশিং মেশিন কিনে নিন, আপনার নিত্যদিনের কাজ হবে আরও সহজ ও স্বাচ্ছন্দ্যদায়ক।