অবশেষে দেশের সমুদ্রসীমায় শুরু হতে যাচ্ছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান। চলতি মাসেই বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বহুমাত্রিক জরিপ (মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভে) কাজ শুরু করছে আন্তর্জাতিক কোম্পানি টিজিএস-স্লামবার্জার। যার চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়া যাবে ২০২৪ সালে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিগত বছরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি পরিস্থিতি অস্থির হয়ে ওঠে। ক্রুড অয়েলের (অপরিশোধিত তেল) দাম ব্যারেল প্রতি ১৭০ ডলার ছাড়িয়ে যায়। এমতাবস্থায় আর্থিক সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ব্যতীত ডিজেল তেল, এলএনজি গ্যাস আমদানি বন্ধ করে দেয় সরকার। যার প্রভাব পড়ে গ্রাহক ও শিল্পখাতে।
জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় দীর্ঘদিন ধরে সাগরে অনুসন্ধান চালানোর কথা বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের আগ্রহ থাকলেও মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের তথ্য না থাকায় সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে বাংলাদেশের আহ্বানে সাড়া দিচ্ছিলো না বিদেশি বহুজাতিক কোম্পানিগুলো।
তবে টিজিএস-স্লামবার্জার সার্ভের কাজ শুরুর মাধ্যমে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যকরী গতি পাবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
আন্তর্জাতিক আদালতে ২০১২ সালে মিয়ানমার ও ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির পর ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি সমুদ্র অঞ্চলের ওপর মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের। এরপর বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক দরপত্রে খুব একটা সাড়া মেলেনি। এমতাবস্থায় পুরো সমুদ্রসীমায় একটি পূর্ণাঙ্গ বহুমাত্রিক জরিপ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
অনুসন্ধান বিবেচনায় বঙ্গোপসাগরের অগভীর ও গভীর অংশকে মোট ২৬টি ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে অগভীর অংশে ব্লক ১১টি। গভীর সমুদ্রে ব্লক ১৫টি। সবগুলো ব্লকে মাল্টিক্লায়েন্ট সার্ভের জন্য ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে পেট্রোবাংলা। দরপত্র মূল্যায়নে নরওয়ের কোম্পানি টিজিএস এবং ফ্রান্সের স্লামবার্জার কনসোর্টিয়াম যোগ্য বলে নির্বাচিত হয়।
পরবর্তীতে ২০২০ সালের মার্চে পেট্রোবাংলার সঙ্গে চুক্তি হয় টিজিএস-স্লামবার্জারের। তার তিন বছর পর কার্যক্রম শুরু করছে প্রতিষ্ঠানগুলো।
টিজিএস এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, শুরুতে প্রায় ১১ হাজার লাইন কিলোমিটার আধুনিক টুডি সার্ভে চালানো হবে। পুরো প্রকল্পে ৩২ হাজার লাইন কিলোমিটার মাল্টিক্লায়েন্ট সিসমিক সার্ভে চালানো হবে।
এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন এন্ড মাইনস) প্রকৌশলী মো. কামরুজ্জামান খান বলেন, টিজিএস-স্লামবার্জার চলতি মাসের ৩ তারিখে সার্ভে কাজ শুরু করেছে। প্রাথমিক সার্ভের তথ্য পেতে পাঁচ থেকে ছয় মাস লাগবে। এই সার্ভের তথ্যটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে আমরা জানতে পারবো, কোথায় তেল-গ্যাসের সম্ভাবনা আছে। আগে তথ্য ছিল না বিধায় বিদেশি কোম্পানিগুলো এখানে কাজের আগ্রহ দেখায়নি। তবে আশা করছি, এ সার্ভের ফলে আমরা তেল-গ্যাস অনুসন্ধান এবং উত্তোলনে সফল হতে পারবো।