এপ্রিল ২৬, ২০২৪

প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ থকে প্রায় সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ছাড়ের আবেদন করেছে দেশের পুঁজিবাজারে বস্ত্র খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড। এ অর্থ দিয়ে কোম্পানি থেকে ছাঁটাই এবং পদত্যাগ করা কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। অর্থ ছাড়ের জন্য পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আবেদন করা হয়েছে।

সম্প্রতি আবেদন জানিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুং ওয়ে মির। সেই সঙ্গে বিষয়টি কমিশনার শেখ শামসুদ্দিনকেও অবহিত করা হয়েছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোম্পানির পর্ষদ বর্তমান কর্মীদের অনুপ্রাণিত করে কোম্পানিকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে, অনেকেই সহযোগিতামূলকভাবে কাজ করছেন। কিন্তু, ছাঁটাই এবং পদত্যাগ করা কর্মীরা তাদের বকেয়া বেতন-ভাতা অবিলম্বে আদায়ের দাবিতে প্রতি পাক্ষিকে ঢাকা ইপিজেডের গেটের সামনে সমাবেশ এবং বিক্ষোভ করছেন। এতে কোম্পানির কাজের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এ পর্যন্ত ছাঁটাই ও পদত্যাগ করা কর্মীদের বকেয়া বেতন ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। কোম্পানির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য এবং ঢাকা ইপিজেড কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা বজায় রাখার জন্য ছাঁটাই এবং পদত্যাগ করা কর্মীদের বকেয়া অর্থ প্রদান করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, উল্লিখিত পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিএসইসিকে টাকা ছাড়ের বিষয়ে অনুরোধ জানাচ্ছি। ঈদুল আজহার ছুটির আগে ছাঁটাই এবং পদত্যাগ করা শ্রমিকদের বকেয়া নিষ্পত্তি করতে আইপিও তহবিল থেকে ১৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা ছাড়ের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

এর আগে গত এপ্রিলে কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদসহ সংশ্লিষ্ট পাঁচটি ব্যাংকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএসইসি। সভায় রিং সাইন টেক্সটাইলস লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সকল সদস্য এবং বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন কর্তৃপক্ষ (বেপজা), প্রিমিয়ার ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক এবং উরি ব্যাংক লিমিটেডের একজন করে প্রতিনিধিকে ওই সভায় অংশগ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে রিং সাইনের বিদ্যমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়। এই বৈঠকে রিং সাইন অধিগ্রহণ পরবর্তী সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।

২০১৮ সালের ১২ মার্চ বিএসইসি রিং সাইন টেক্সটাইলসকে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা তোলার অনুমোদন দেয়। কোম্পানিটি যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয়, ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ খাতে ব্যয় করতে শেয়ারবাজারে ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ১৫০ কোটি টাকা তোলে। ২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় কোম্পানিটি। তবে, লোকসানের কারণে এক বছরের মধ্যে ২০২০ সালের শেষদিকে কোম্পানিটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে কোম্পানিকে উৎপাদনে ফেরাতে কয়েক দফায় পদক্ষেপ নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রথম দফায় কোম্পানির পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়। দ্বিতীয় দফায় আইপিওর ফান্ড ব্যবহারে অনুমোদন এবং ভুয়া প্লেসমেন্ট শেয়ার বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। রিং সাইনের উৎপাদন শুরু করতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে বেপজা। দীর্ঘদিন উৎপাদন বন্ধ থাকার পর রিং সাইন টেক্সটাইলস মিলস গত বছরের ১৩ জুন থেকে ২৫ শতাংশ উৎপাদনে ফেরে।

এদিকে, উৎপাদনে ফেরার পর কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করতে চায় একাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে প্রথমে রিং শাইনকে অধিগ্রহণ করতে আগ্রহ প্রকাশ করে ইউনিয়ন গ্রুপ। পরে ইউনিয়ন গ্রুপ তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। এর কিছু দিন পর রিং সাইনকে অধিগ্রহণ করতে চায় ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস, যা শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কুইন সাউথ টেক্সটাইল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ওয়াং জেমির মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে কোম্পানিটিকে অধিগ্রহণ করার সম্মতি পায় ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল মিলস।

রিং সাইনকে অধিগ্রহণ করার আগে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছিল, বিএসইসির অধিগ্রহণের অনুমতি ও সহায়তা পেলে প্রথম ৬ মাসের মধ্যে রিংসাইন টেক্সটাইলের সকল মেশিন রিমডেলিং এবং মেরামত করা হবে। আগামী ২০২৩ সালের মার্চ/এপ্রিলের মধ্যে প্রতি মাসে ৬ থেকে ৮ মিলিয়ন (৬০-৮০ লাখ টাকা) ব্যবসায় থেকে আয় করা সম্ভব হবে। এতে কোম্পানিটির প্রতি হারানো আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় রিং সাইন টেক্সটাইলস লিমিটেড। বর্তমানে ‘এ’ ক্যাটাগরির এ কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি ৩১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সে হিসেবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ কোটি ৩ লাখ ১৩ হাজার ৪৩টি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ২১.৩২ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১১.০৭ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬.৭৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৬০.৮২ শতাংশ শেয়ার আছে। বৃহস্পতিবার (১১ মে) কোম্পানিটির শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ৯.৮০ টাকায়।

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *