শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ বিরুদ্ধে বীমা গ্রাহক ও শেয়ারহোল্ডারদের ৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা আত্মসাত অভিযোগে ওঠেছে। জাল-জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাত করেছেন তিনি।
উল্লেখিত বিষয়ে প্রমান পাওয়ায় গতকাল মঙ্গলবার মো. হেময়েত উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মঙ্গলবার (৯ মে) দুদকের জনসংযোগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দুদকের উপ-পরিচালক মো: আবু সাঈদ এই মামলা দায়ের করেন। দন্ডবিধির ৪০৯/৪২0/467/468 ধারা এবং ১৯৪৭ সনের ২ নং প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় তার (মো: হেমায়েত উল্ল্যাহ) বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামী মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে ঢাকার ৩টি ব্যাংকে ১৫টি হিসাব খুলেন। একই সাথে ওই হিসাবগুলোতে নিজেকেই নমিনি হিসেবে দেখান। পরে ওই হিসাবগুলো হতে ৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে বর্ণিত হিসাব করা হয়। পরবর্তীতে ওই অর্থ বর্ণিত হিসাবধারী ব্যতীত নগদে উত্তোলন করে মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ আত্মসাত করত। যা দন্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
ঘটনার বিবরনীতে বলা হয়, বিএফআইইউ (বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট), বাংলাদেশ ব্যাংক, ঢাকা কর্তৃক অভিযুক্ত ব্যক্তির (মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ) বিরুদ্ধে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। বিএফআইইউর তদন্তে অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। পরবর্তীতে বর্ণিত বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কোম্পানী (ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্সুরেন্স) হতে অভিযোগ ও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট নথি দুদকে প্রেরণ করা হয়। দুদকের প্রধান কার্যালয়ে (ঢাকা) অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করার (এজাহার দায়ের) সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, পাশপাশি সংশ্লিষ্ট শাখাকে নির্দেশনা প্রদান করে। প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক প্রাপ্ত অভিযোগ ও অভিযোগের সাথে সংযুক্ত কাগজপত্রাদি পর্যালোচনা করা হয়।
পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসে, মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ ওই পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোম্পানীর কর্মরত ৭জন কর্মকর্তা (সাবেক এসইভিপি সৈয়দ আব্দুল মতিন, সাবেক ইভিপি মো. ইব্রাহিম, এসইভিপি মোহাম্মদ আব্দুল হালিম, ইভিপি মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান, ইভিপি মো. মাহবুবুল মাওলা, সাবেক ইভিপি এইচ এম নুরুল কবীর তৌহিদী এবং মোস্তফা জামান হামিদী স্বাধীন জেইভিপি) নামে ওয়ান ব্যাংক (ইসলামী ব্যাংকিং শাখা, গুলশান) ঢাকাতে হিসাব খোলেন। হিসাব খোলার ফরম পর্যালোচনায় বেরিয়ে আসে, গ্রাহক কর্তৃক ব্যাংক হিসাবগুলো খোলা হয়নি। অভিযুক্ত মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ কর্তৃক ব্যাংকের ম্যানেজার বরাবর পত্র প্রেরণের প্রেক্ষিতে খোলা হয়েছে। হিসাবসমূহের নমিনি অভিযুক্ত মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ নিজেই।
এছাড়া আল আরাফা ইসলামী ব্যাংকের (বসুন্ধরা শাখা, ঢাকা) বর্ণিত ৭ কর্মকর্তার নামে মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ প্রতারণা ও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আরো ১৩টি হিসাব খুলেছেন এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে (তোপখানা রোড শাখা, ঢাকায) একই পদ্ধতি অবলম্বন করে আরো ২টি হিসাব খুলেন। ওই সবগুলো হিসাবে নিজেকে নমিনি করেন।
হিসাবগুলোর হিসাব বিবরণীতে বেরিয়ে আসে, আল-আরাফা ইসলামী ব্যাংকের (বসুন্ধরা শাখা ও কারওয়ানবাজার শাখা) এবং শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকে (কারওয়ান বাজার শাখায়) ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর নামে যথাক্রমে হিসাব নং- ০৫৪১২২০০০০০২০২, ১১৭১২২০০০০০১৫ এবং ০০৯০২১৬০২০০০৩ হতেই মূলত ক্লিয়ারিংযের মাধ্যমে বর্ণিত ব্যক্তি হিসাবগুলোতে স্থানান্তর করে মোট ৩৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা জমা করা হয়। ওই অর্থ হিসাবধারী ব্যতীত বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে নগদে উত্তোলন করে মো. হেমায়েত উল্লাহ আত্মসাত করে। উল্লেখিত অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি বিএফআইইউ কর্তৃক তদন্ত করা হলে প্রাথমিকভাবে তা প্রমাণিত হয়।