আসছে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা খাতে বাজেটে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৩১ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা। সেই হিসাবে আসছে অর্থবছরে বরাদ্দ ২ হাজার ৯৬১ কোট টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এ প্রস্তাব পেশ করেন। স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরির সভাপতিত্বে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আসছে অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বলেন, ‘সকল স্তরে শিক্ষার মান বৃদ্ধি আমাদের বিশেষ অঙ্গীকার। শিক্ষাখাতে বিগত ১৪ বছরে আমাদের অনুসৃত নীতি-কৌশল ও লক্ষ্যাভিমুখী সম্পদ সঞ্চালনের সুফল আমরা পেয়েছি। আজকের শিশুই আমাদের উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিবে। তাই শিক্ষার্থীদের চতুর্থ শিল্পবিপ্লব, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতসহ যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সক্ষম করে তুলতে চাই। আমাদের চাওয়া হলো বিজ্ঞানভিত্তিক, প্রযুক্তিনির্ভর, দক্ষতাবর্ধক, উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতা সহায়ক এবং সেবার মানসিকতা, দায়িত্ব ও বিবেকবোধ জাগ্রত করার উপযোগী শিক্ষা দেওয়া।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা চলমান কার্যক্রম, বিশেষ করে, অবকাঠামো উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, মেরামত ও সংস্কার, উপবৃত্তি, পাঠ্যপুস্তকসহ অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, শিক্ষক নিয়োগ বিতরণ, শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ, ডিজিটালাইজেশন, স্কুল ফিডিং ইত্যাদি কার্যক্রম অব্যাহত রাখবো।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষাকে কোমলমতি শিশুদের জন্য আনন্দঘন করার উদ্দেশ্যে আমরা সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের সুবিধার্থে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে র্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে।’
মুস্তফা কামাল বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় আরও উৎকর্ষ আনার জন্য শিক্ষা পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা বিকেন্দ্রীকরণ করা হচ্ছে এবং স্কুল লেভেল ইমপ্রুভমেন্ট প্ল্যান (স্লিপ) বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর আওতায় মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন স্তরে আর্থিক ক্ষমতা পুনর্বিন্যস্ত করা হয়েছে। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুসহ সমাজের সকল শিশুদের মূলধারার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া নিশ্চিতকল্পে একীভূত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে ২৬ হাজার ৩৬৬ জন শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের উপযোগী করার জন্য প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাদানের ওপর অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, ইন্টারনেটসহ সাউন্ড-সিস্টেম সরবরাহ করা হয়েছে। শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে, পাঠদান আকর্ষণীয় হচ্ছে ও শিশুদের পাঠে মনোযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
‘উন্নয়ন অগ্রযাত্রার দেড় দশক পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে’ শিরোনামে এবারের বাজেটের সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, ডলার সংকটে সৃষ্ট অর্থনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা।
ইতিহাসের বৃহত্তম এই বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটের চূড়ান্ত আকার (ব্যয়) ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে আয় ৫ লাখ ৩ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। ঘাটতি ২ লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ ৫ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৫০ লাখ ৬ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।