প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করেন । যারা পৃথক বিনিয়োগকারী ও প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয়কে একত্রিত করে পরিচালনা করেন।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী হলো শেয়ারবাজারের মূল বিনিয়োগকারী, বাজারের গুরুত্বপূর্ণ নির্মাতা, বাজারের তারল্য এবং কার্যকলাপকে সমর্থনকারী। এককথায় বলতে পারি বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। অর্থাৎ পুঁজিবাজারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন এবং স্থিতিশীলতার কারণ।
নিচের এই তথ্যটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের প্রত্যাশিত ইতিবাচক প্রভাবগুলির পূর্বাভাস দেয় :
• আর্থিক বাজারের তারল্য
• উন্নয়নের সাথে একত্রে সঞ্চয় মোবিলাইজেশন, দক্ষ বিনিয়োগ বরাদ্দ অর্থনীতির কাজ
• বাজারের দক্ষতা এবং লেনদেনের খরচ কমাতে অবদান, সালিসি প্রক্রিয়ার উন্নতি
• তথ্য বিশ্লেষণ এবং ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ব্যবহার করে তথ্য অসামঞ্জস্য হ্রাস, ফলস্বরূপ পৃথক বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকি হ্রাস
কিন্তু বড়ই পরিতাপের বিষয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অপ্রাতিষ্ঠানিক সুলভ আচরণ সর্বদাই পরিলক্ষিত হয়ে আসছে যা পুঁজিবাজার স্থিতিশীলতার ও আস্থার সংকটের অন্যতম কারণ। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারী হলে মার্কেট স্থিতিশীলতার ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে পারে।
আমাদের পুঁজিবাজারের সংকট প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের প্রবিধান এবং বাজারের অনেক ত্রুটি প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল- প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের পশুপালের আচরণ, বাজারে অগ্নি বিক্রয় (স্বল্প মূল্যে বিক্রয় ), বহিঃপ্রবাহ, বিনিয়োগের জন্য স্বল্পমেয়াদী পদ্ধতি, ব্যবসা এবং নিয়ন্ত্রণ, নিয়ন্ত্রক তদারকি এবং নির্দিষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিপজ্জনক আচরণ। এসব কারণে ইন্ডিয়া বা অন্যান্য দেশের মতো Crisis moments বা Shock absorbing সিচুয়েশনে আমাদের ডোমেস্টিক ইনস্টিটিউশন তথা ইনস্টিটিউশনাল ইনভেস্টরদের বিশেষ ভূমিকা পরিলক্ষিত হয় না। পুঁজিবাজারে সংকট এবং স্থিতিশীলতার উপর এর প্রভাব, আর্থিক বাজারের গতিবিধি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আচরণের মধ্যে গুরুতর পদ্ধতিগত ঝুঁকি এবং আন্তঃসংযোগ প্রকাশ করেছে সর্বদাই। আর্থিক বাজারে তাদের বিনিয়োগ নীতি, বহিঃপ্রবাহ এবং অগ্নি বিক্রয় বাজারের স্থিতিশীলতা এবং আর্থিক সংকটের গভীরতার উপর একটি বড় প্রভাব। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার মধ্যে সামঞ্জস্যহীনতা।
পুঁজিবাজার বিষয়ে মানুষের ধ্যানধারণা এবং আস্থার সংকট চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০১০ এর মহাধসের পর আজও আমরা একটি ভাইব্রেন্ট, স্থিতিশীল পুঁজিবাজার পাইনি। এ ব্যর্থতা কার? কোথাও যেন কেউ নেই এমন একটি অবস্থা। আর সাধারণ বিনিয়োগকারীর প্রতি আমার একটা উদাত্ত আহ্বান আপনাদের সাধারণ না অসাধারণ হতে হবে। নিজেদের পুঁজির নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে স্টক মার্কেটে দ্রুত অর্থ খোঁজা দ্রুত অর্থ হারানোর নিশ্চিত উপায়।
মেজবাউদ্দিন মোঃ জীবন চৌধুরী
অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও, আহকাম এন্ড অ্যাসোসিয়েটস বিজনেস লিমিটেড
ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ট্যাক্সসেন্স লিমিটেড