প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার অবশ্যই সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে গণহারে সামরিক কর্মকর্তাদের হত্যাকান্ড এবং ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্রের মদদপুষ্ট অগ্নি সন্ত্রাসের বিচার করবে। তিনি বলেন, “আপনাদের সান্তনা দেবার মতো কোন ভাষা আমার জানা নেই। কারণ, আমিও একদিন আপনাদেরই মতো শুনেছিলাম যে আমার আর কিছুই নেই (আমার বাবা-মা ও ভাইদের হত্যাক-ের পর)। (কিছু) অপরাধী ইতিমধ্যে শাস্তি পেয়েছে, (কেউ কেউ) তা পাচ্ছে। আর (বাকি অন্যরা) শাস্তির মুখোমুখি হবে।”
তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবনে সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নিহত সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পরিবারের সদস্য, ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নিসংযোগে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য এবং সম্প্রতি বঙ্গবাজার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ও দোকানদারদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা তার মতো আপনজনদের হারিয়েছেন, তাদেও তিনি ঈদ-উল-ফিতরের আগে মতবিনিময় ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি তাদের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার সামর্থ অনুযায়ী আপনাদের পাশে থাকব’।
সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমান তার শাসনামলে কী করেছিলেন, তা জনগণ ভুলে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়া প্রথমে জাতির পিতাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা করেন এবং তারপর একই বছরের ৩ নভেম্বর কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেন। তিনি বলেন, জিয়া পরে একের পর এক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে অনেক সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেন। জিয়াউর রহমান যেসব সামরিক কর্মকর্তাকে হত্যা করেছিলেন, তারাও জানেন না, তাদের দোষ কী ছিল- একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়া শুধু সামরিক কর্মকর্তাদেরই হত্যা করেন নি, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকর্মীকেও হত্যা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যা মামলার বিচার করতে গিয়ে বিচারকদের বিব্রত বোধ করতে হয়েছে।
সরকার পতনের আন্দোলনের নামে ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের অগ্নি সন্ত্রাসের বিষয়ে তিনি বলেন, মানুষ কীভাবে মানুষকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করতে পারে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) কখনই চায় না, দেশের মানুষ ভালো থাকুক।
সম্প্রতি রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকা-ের ঘটনা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সন্দেহ করছেন যে, বিএনপি-জামায়াত জোট এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে, কারণ তারা অতীতে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করেছে। দুস্থ মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে তার বাবা দেশ স্বাধীন করেছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিও একই লক্ষ্যে কাজ করছি।
সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের প্রহসনমূলক সামরিক বিচারে ফাঁসিতে ঝুলানো বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট দেলোয়ার হোসেনের স্ত্রী নুর নাহার বেগম বর্ণনা করেছেন তার স্বামীকে কিভাবে অমানবিকভাবে হত্যা করা হয়েছিল এবং কিভাবে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে গণকবরে দাফন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, "গত ৪৬ বছরে কেউ আমাদের কষ্টের কথা শুনতে চায়নি। কিন্তু, আপনি আমাদের কষ্টের কথা ধৈর্য ধরে শুনেছেন, কারণ আপনি আপনার বাবা-মা এবং ভাইদের হারিয়েছেন। আর সেকারনে আমরা ভিতরে কেমন বোধ করছি, তা আপনি বুঝতে পারেন ।" ৭২ বছর বয়সী নুর নাহার এখন তার জীবদ্দশায়ই অবিলম্বে তার স্বামী হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, “ তা’হলে জিয়াউর রহমান কী করেছেন, তা বিশ্বের সব মানুষ জানতে পারবে।” তিনি সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের গণকবরের জায়গায় একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানান। নুর নাহার বেগমের বেদনাদায়ক বর্ণনা শুনে প্রধানমন্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েন।
জিয়াউর রহমানের কথিত সামরিক বিচারে নিহত বিমান বাহিনীর সার্জেন্ট মোরশেদুল আলমের মেয়ে মাকসুদা পারভিন কেঁদে কেঁদে বাবাকে হত্যার দায়ে জিয়াউর রহমানের বিচার দাবী করেন এবং তার মাথায় প্রধানমন্ত্রীর হাত রেখে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আশ্বাস চাইলেন। প্রধানমন্ত্রী একপর্যায়ে মাকসুদার কাছে গিয়ে মাকসুদার মাথায় হাত রেখে তাকে জড়িয়ে ধরেন।
পুলিশের উপ-পরিদর্শক মকবুল হোসেন জানান, ২০১৩ সালে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানাধীন সাহেববাজার এলাকায় দায়িত্ব পালনকালে বিএনপি-জামায়াতের বোমা হামলায় তার দুই হাতের কব্জি হারিয়েছেন। তিনি বলেন, “পুলিশে যোগদানের দেড় মাস পর, আমি আমার কব্জি হারিয়েছি। আমি আমার সন্তানদের হাত দিয়ে আদর করতে পারি না এবং আমার সন্তানরা যখন জিজ্ঞেস করে 'তোমার হাত (কব্জি) কোথায়' ? আমি কোন জবাব দিতে পারি না। আমি অবিলম্বে বিচার দাবি করছি।”
সালাহউদ্দিন ভূঁইয়া একটি দোকানে চাকরির দায়িত্ব পালন শেষে এলিফ্যান্ট রোড এলাকা থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে যাত্রাবাড়ী এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাসে বিএনপি-জামায়াতের বোমা হামলায় তার মুখ ও হাত মারাত্মকভাবে পুড়ে যায়। তিনি অবিলম্বে অপরাধীদের বিচার দাবি করেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের আমলে তথাকথিত কোর্ট মার্শালের নামে সংঘটিত গণহত্যা এবং ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত চক্রের অগ্নি সন্ত্রাসে মানুষ হত্যা ও আহত করার পৃথক দুটি ভিডিও ক্লিপ অনুষ্ঠানে প্রদর্শন করা হয়।