প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের নির্দেশে ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি কথিত ‘বিশেষ সামরিক অভিযানের’ নামে ইউক্রেনে হামলা চালায় রুশ সেনারা। এরপর কেটে গেছে এক বছরেরও বেশি সময়। এই সময়ে ইউক্রেনীয়দের দমনে অসংখ্য অস্ত্র ব্যবহার করেছে রুশ বাহিনী। এতে তাদের অস্ত্রসস্ত্র ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছে।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখতে এখন নিজেদের পুরোনো আমলের অস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়ার সেনারা।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন সোমবার (৮ মে) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্চের শেষ দিকে সোভিয়েত আমলের টি-৫৫ মডেলের ট্যাংকগুলো পুরোনো গুদাম থেকে বের করে দেশটি। যেগুলো ১৯৪৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের রেড আর্মি ব্যবহার করত। এই ট্যাংকগুলো এতই পুরোনো যে— এগুলো এখন অনেক দেশের জাদুঘরে রয়েছে।
তবে ট্যাংকগুলো পুরোনো হলেও এগুলো এখনো বেশ কার্যকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রেড আর্মির জন্য তৈরি এ যুদ্ধট্যাংক পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১ হাজারটি তৈরি করা হয়। সহজে ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের কারণে মিসর, চীনসহ অনেক দেশ এগুলো নেয়। বর্তমানে কিছু দেশে ট্যাংকগুলো এখনো সচল আছে।
তবে যুগ বদলের সঙ্গে সঙ্গে এ ট্যাংকগুলোর শক্তি ও সামর্থ্য দুটোই কমেছে। ১৯৯১ সালে গালফ যুদ্ধে ইরাকি বাহিনীর ব্যবহৃত এসব ট্যাংক ২৩ কিলোমিটার দূর থেকেও আঘাত হেনে ধ্বংস করার রেকর্ড রয়েছে মার্কিন ট্যাংকের।
রাশিয়ার কাছে যেসব টি-৫৫ ট্যাংক ছিল সেগুলোকে ১৯৮০ সালের পর থেকে অবসরে পাঠানো শুরু হয়। তবে ট্যাংকগুলো ধ্বংস করার বদলে রেখে দেয় মস্কো। দেশটির চিন্তা ছিল, এগুলো প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে। এখন সেটিই করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তাদের কাছে টি-৫৫ মডেলের অন্তত ২৮ হাজার ট্যাংক আছে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
রাশিয়ার টি-৫৫ ট্যাংকগুলো আর্সেনভ ঘাঁটিতে রাখা ছিল। স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবিতেও দেখা গেছে এই ঘাঁটি থেকে পুরোনো ট্যাংক বের করছে দেশটি। এছাড়া কয়েকদিন ধরে যুদ্ধের সম্মুখভাগেও এগুলো দেখা যাচ্ছে।
রবার্ট লি নামে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সামরিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, ইউক্রেন যুদ্ধের আগে রাশিয়ার ৩ হাজার আধুনিক ট্যাংকের বিশাল বহর ছিল। কিন্তু ইউক্রেনীয়দের হামলায় তাদের চার ভাগের তিন ভাগ ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন যুদ্ধের মধ্যে তাদের যে পরিমাণ ট্যাংক দরকার সেই অনুযায়ী নতুন ট্যাংক তৈরি করতে পারছে না দেশটি। ফলে পুরোনো ট্যাংক ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধের ময়দানে টি-৫৫ ট্যাংক ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেনি। কিন্তু সামরিক ব্লগারদের প্রকাশিত সাম্প্রতিক ছবিতে এসব ট্যাংক যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা গেছে।
সূত্র: সিএনএন