দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের জন্য বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে (মার্চেন্ট ব্যাংক, ব্রোকার ও ডিলার) ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) থেকে ঋণ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তালিকাভুক্ত কোম্পানির ‘এ’ ক্যাটাগরি শেয়ারে পাঁচ বছর বিনিয়োগসহ ১৩ শর্তে এ ঋণ দেওয়া হবে। পুঁজিবাজারে তারল্য বাড়িয়ে গতিশীল করতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি এ বিষয়টি অনুমোদন দিয়ে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তার কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিএসইসির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, বেশকিছু শর্তসাপেক্ষে বিএসইসি (ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ড) বিধিমালা, ২০২১ এর বিধি ৭(৪)(২) অনুযায়ী সিএমএসএফ ফান্ড পুনঃঅর্থায়নের জন্য গ্রাহকদের মার্জিন ঋণ হিসাবে বাজার মধ্যস্থতাকারীকে ঋণ প্রদানের অনুমতি দেওয়া হলো।
বিএসইসির দেওয়া শর্তে উল্লেখ করা হয়েছে, সিএমএসএফ বিএসইসি (ক্যাপিটাল মার্কেট স্টেবিলাইজেশন ফান্ড) বিধিমালা, ২০২১ এর বিধি ৫(১৫) অনুযায়ী বাজার মধ্যস্থতাকারী এবং মার্কেট মেকারকে ঋণ বা সহায়তা প্রদানের জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করবে। সিএমএসএফ কোনো বাজার মধ্যস্থতাকারীর কাছে ঋণ অনুমোদনের আগে ক্রেডিট ঝুঁকি মূল্যায়ন করবে। তাদের গ্রাহক মার্জিন ঋণ নীতিমালা অনুযায়ী ঋণ প্রদান করতে পারবে। ঋণটি ডিলার কোড বা নিজস্ব পোর্টফোলিওতে ব্যবহার করতে হবে। সেক্ষেত্রে শুধু ‘এ’ ক্যাটাগরির সিকিউরিটিজে একটানা ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগের করতে হবে। এ বিষয়ে সিএমএসএফ পাক্ষিক (১৫ দিন) ভিত্তিতে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ ব্যবহারের রিপোর্ট সংগ্রহ করবে এবং মাসিক (৩০ দিন) ভিত্তিতে (প্রতি মাসের ৭ দিনের মধ্যে) কমিশনের কাছে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেবে।
শর্তে আরও বলা হয়েছে, বাজার মধ্যস্থতাকারীরা তাদের নিজের কাছ থেকে ডিলার অ্যাকাউন্ট বা নিজস্ব পোর্টফোলিও অ্যাকাউন্টে ঋণের পরিমাণের সমতুল্য অর্থ জমা নিশ্চিত করবে। মার্জিন ঋণের জন্য শতভাগ জামানত থাকতে হবে এবং সেটা শুধু বিজি বা অন্য যেকোন ডিসপোজেবল সিকিউরিটিজ ফর্মে উল্লেখ থাকবে। সিএমএসএফের বোর্ড অব গভর্নর দ্বারা সুদের হার নির্ধারণ করা হবে, যা ৩ মাসের গড় থেকে কম হবে না। সেক্ষেত্রে ব্যাংকিং খাতে প্রচলিত এফডিআর হারের সর্বোচ্চ হার থেকে নির্ধারণ করা হবে। ঋণের সর্বোচ্চ মেয়াদ হবে ১৮০ দিন, যা নবায়নযোগ্য।
শর্তে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, পুনঃঅর্থায়নের জন্য বাজার মধ্যস্থতাকারীর ঋণের জন্য একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার, মোট তহবিলের সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ হবে। সেসব স্টক ব্রোকারকে ঋণের অনুমতি দেওয়া যাবে না, যার সমন্বিত গ্রাহক অ্যাকাউন্টে (সিসিএ) ঘাটতি রয়েছে বা ঝুঁকিভিত্তিক মূলধন পর্যাপ্ততা (আরবিসিএ) রয়েছে বা বিগত ৫ বছরে কোনো শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
সিএমএসএফ ঋণের আইটি মডিউল, যেমন: ঋণ আবেদন মডিউল, ঋণের অবস্থা মডিউল (পরিমাণ, মেয়াদ, সুদ, পরিশোধ ইত্যাদি), ডকুমেন্টেশন মডিউল ইত্যাদি উন্নয়নের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেবে। এছাড়া, ঋণ আবেদন প্রাপ্তির ২১ দিনের মধ্যে সিএমএসএফ যোগ্য ঋণগ্রহীতাদের ঋণ অনুমোদন বা প্রত্যাখ্যানের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। মোট ঋণের পরিমাণ একবারে ২০ কোটির বেশি বা ৫ কোটির কম হবে না।
বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করার জন্য কাজ করছে সংস্থা বিএসইসি। এবার পুঁজিবাজারে তারল্য সংকট দূর করতে সিএমএসএফকে কাজে লাগাতে চায় কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সিএমএসএফ থেকে ঋণ দেওয়া উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।