ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে পাকিস্তান। আর এর মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটিতে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি এতোটাই ব্যাপক যে, ফেডারেল রাজধানী ইসলামাবাদের পাশাপাশি লাহোর ও করাচির মতো বড় শহরসহ দেশের বিশাল অংশে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের প্রভাব পড়েছে।সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে এই বিভ্রাট দেখা দেয় বলে জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডন।পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি হ্রাস পাওয়ার পরে সোমবার সকালে পাকিস্তানজুড়ে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।জ্বালানি মন্ত্রণালয় বলেছে, জাতীয় গ্রিডের ফ্রিকোয়েন্সি সিস্টেম সোমবার সকাল ৭টা ৩৪ মিনিটে ডাউন হয়ে গেলে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক বিভ্রাট দেখা দেয়। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় মন্ত্রণালয়টি আরও জানিয়েছে, ‘সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’
এদিকে সংবাদমাধ্যম জিও নিউজের সাথে এক সাক্ষাৎকারে পাকিস্তানের জ্বালানি মন্ত্রী খুররম দস্তগীর বিদ্যুৎ বিভ্রাটকে ‘বড় ধরনের কিছু নয়’ বলে উল্লেখ করেছেন।তিনি বলেন, ‘শীতকালে, দেশব্যাপী বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়ায় এবং অর্থনৈতিক পরিমাপ হিসাবে, আমরা রাতে আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিই।’বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘তবে, আজ সকালে যখন সিস্টেমগুলো চালু করা হয় তখন দেশের দক্ষিণে দাদু এবং জামশোরের মধ্যে কোথাও কম্পাঙ্কের তারতম্য এবং ভোল্টেজের ওঠানামা পরিলক্ষিত হয়।’দস্তগীর আরও বলেন, পেশোয়ার এবং ইসলামাবাদে গ্রিড স্টেশন পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে। তার ভাষায়, ‘আমি আপনাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে সারা দেশে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুরোপুরি চালু করা হবে।’
এর আগে ডননিউজটিভি জানিয়েছে, ইসলামাবাদ, করাচি, কোয়েটা, পেশোয়ার এবং লাহোরসহ পাকিস্তানের বিশাল অংশ বিদ্যুৎবিহীন রয়েছে।সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, করাচির মালির, ল্যান্ডি, গুলিস্তান-ই-জোহর, আখতার কলোনি, দ্বিতীয় চুন্দ্রিগার রোড, নিউ করাচি, গুলশান, ইব্রাহিম হায়দারি এবং কোরাঙ্গিতেও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে।এদিকে এক টুইট বার্তায় কে-ইলেক্ট্রিকের মুখপাত্র ইমরান রানা নিশ্চিত করেছেন, দেশব্যাপী ব্রেকডাউনের ফলে করাচিতেও বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, কেই টিম পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে এবং বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।এদিকে কোয়েটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির মুখপাত্র মুহাম্মদ আফজাল ডন ডটকমকে বলেছেন, প্রদেশের তিনটি সঞ্চালন লাইনে ত্রুটি দেখা গেছে।
এর ফলে বেলুচিস্তানজুড়ে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে।ত্রুটি দেখা দেওয়া তিনটি সঞ্চালন লাইন হচ্ছে — ২২০কেভি উচ-সিব্বি, ২২০কেভি দাদু-খুজদার এবং ২২০কেভি ডেরা মুরাদ জামালি।ডন বলছে, বেলুচিস্তানের ক্ষতিগ্রস্ত শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে— রাজধানী কোয়েটা, পিশিন, কিল্লা আবদুল্লাহ, চমন, লোরালাই ঝাব, কিল্লা সাইফুল্লাহ, মাস্তুং, সিব্বি, জিয়ারাত, কালাত এবং খুজদার।মুহাম্মদ আফজাল আরও বলেছেন, ন্যাশনাল ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডেসপ্যাচ কোম্পানির (এনটিডিসি) মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে।এদিকে রাজধানী ইসলামাবাদে ব্রেকডাউনের প্রভাব প্রায় ১১৭টি গ্রিড স্টেশনের ওপর পড়েছে বলে ইসলামাবাদ ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির মুখপাত্র জানিয়েছেন।ডন ডটকমকে তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণ সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে এবং সিস্টেমটিকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পর্যায়ক্রমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার করা হচ্ছে।’ইলেকট্রিক সিস্টেমের সম্পূর্ণ মেরামত করতে সময় লাগবে বলেও জানান এই মুখপাত্র।