মার্চ ২৯, ২০২৪

শেয়ারবাজারে নিষিদ্ধ হলেন সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত মার্চেন্ট ব্যাংক বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হামদুল ইসলাম। একইসঙ্গে কারসাজিতে জড়িত থাকায় বড় অংকের অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হয়েছেন তিনি। এর ফলে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট কোন কার্যক্রমে আগামী ৫ বছর সম্পৃক্ত থাকতে পারবেন না হামদুল। সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, নিষিদ্ধ হওয়া বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হামদুল ইসলাম বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) নির্বাহী কমিটির সদস্য। দেশের পুঁজিবাজারে দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি শাস্তি হিসেবে পাঁচ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হলেন এই হামদুল। এর আগে কাজী সাইফুর এফসিএ নামের বিতর্কিত আরেক ব্যক্তিকেও পাঁচ বছরের জন্য দেশের পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ করেছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।

সূত্র জানায়, বিনিয়োগকারীদের অর্থ আত্মসাৎ করা ট্রেড সাসপেন্ড হওয়া ব্রোকার হাউজ বানকো সিকিউরিটিজ ও বানকো ফাইন্যান্স একই মালিকানাভুক্ত প্রতিষ্ঠান। বানকো ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হামদুল ইসলাম ছাড়াও কারসাজির সঙ্গে জড়িত থাকায় তাঁর স্ত্রী, শশুর, ভাই এবং বোনকেও অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করেছে বিএসইসি। প্লেসমেন্ট শেয়ার কারসাজি ও সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘনের দায়ে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে কমিশন।

জানা গেছে, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত যেসব কোম্পানির ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিল বানকো ফাইন্যান্স, অবৈধভাবে ওইসব কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার হাতিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে কারসাজি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হামদুল ইসলাম। এর মধ্যে বিবিএস ক্যাবলস, নাহি অ্যালুমুনিয়াম, লাভেল্লো ও সি পার্ল এর ইস্যু ব্যবস্থাপনায় ছিল এ প্রতিষ্ঠানটি। শুধু ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্বে থাকা কোম্পানিগুলোতে নয়, গত ৮ বছরে শেয়ারবাজারে যেসব কোম্পানি রাইট শেয়ার ইস্যু করেছে সেগুলোতেও ছিল তাঁর দখলে ছিল। বিগত ৮ বছরে যতগুলো কোম্পানির রাইট শেয়ার ইস্যু হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই জড়িত ছিলেন হামদুল। কোনটিতে ইস্যু ম্যানেজার আবার কোনটিতে আন্ডাররাইটার হিসেবে ছিল তাঁর প্রতিষ্ঠান।

এদিকে হামদুল ইসলাম যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করতেন সেগুলোতে তিনি তাঁর স্বজনদের ব্যবহার করতেন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের এক তদন্তে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে। তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হামদুল ইসলামের স্ত্রী শাহিদা আরাবি, শশুর আব্দুস সালাম, ভাই সাইফুল ইসলাম এবং বোন হোসনে আরা বেগমের নামে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার হাঁতিয়ে নিয়েছেন বানকোর এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক। হামদুল নিজের এমন অপকর্ম চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। যা ছিল আইন বহির্ভূত।

জানা গেছে, অবশেষে বিএসইসির তদন্তে হামদুল ইসলামের শেয়ার কারসাজির বিষয়টি উঠে এলে তার সঙ্গে অপকর্মে জড়িত স্বজনদেরও শাস্তির আওতায় এনেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এর মধ্যে হামদুলের স্ত্রীকে ২ কোটি , বোনকে ৩ কোটি , শশুরকে ৩ কোটি এবং ভাইকে ৪ কোটি টাকার অর্থদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন। অর্থদণ্ড আদায় না হওয়া পর্যন্ত এসব ব্যক্তিদের সকল বিও হিসাব ও লিংক করে শেয়ার স্থানান্তর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

 

শেয়ার দিয়ে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *